Friday, November 24, 2017

কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা


তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ আবার খাবারের সময় অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ নিয়ে রুচিসহকারে খেতে থাকেন। তাঁদের জন্য আরও সুখবর হল এই কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা। ৩৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কাঁচা মরিচ সেদ্ধ করলে কিংবা ভেজে খেলে, তাতে বিদ্যমান ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই এর আসল উপকারিতা পেতে প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে কাঁচা মরিচ কাঁচা খেতে অভ্যাস করুন। এতে আছে ভিটামিন এ, সি, বি-৬, আয়রন, পটাশিয়াম এবং খুবই সামান্য পরিমাণে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট। এগুলো ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এরছাড়াও কাঁচা মরিচের যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে সেগুলো হল- ল্ফ নিয়মত কাঁচা মরিচ খেলে হৃৎপিন্ডর বিভিন্ন সমস্যা কমে যায়।

 নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। 

 কাঁচা মরিচে আছে ভিটামিন এ যা হাড়, দাঁত ও মিউকাস মেমব্রেনকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। 
 কাঁচা মরিচ মেটাবলিজম বাড়িয়ে ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে। 

 কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিটা ক্যারোটিন আছে যা কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমকে কর্মক্ষম রাখে। 

 গরমকালে খেলে ঘামের সাথে বেরিয়ে যায়, ফলে শরীর ঠান্ডা থাকে। কাঁচা মরিচ রক্তের কোলেস্টেরল কমায়। 

 প্রতিদিন একটি করে কাঁচা মরিচ খেলে রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কমে যায়। 
 কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে যা মাড়ি ও চুলের সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। 

 নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে নার্ভের বিভিন্ন সমস্যা কমে। 

 প্রতিদিন খাবার তালিকায় অন্তত একটি করে কাঁচা মরিচ রাখলে ত্বকে সহজে বুিলরেখা পড়ে না। 

 কাঁচা মরিচে আছে ভিটামিন সি। তাই যে-কোনো ধরনের কাটা কিংবা বা ঘা শুকানোর জন্য কাঁচা মরিচ খুবই উপকারী। ল্ফকাঁচা মরিচের 
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি শরীরকে জ্বর, সর্দি-কাশি ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। 

Wednesday, November 22, 2017

লাল ও সবুজ ক্যাপসিকামের মধ্যে কোনটি বেশি উপকারী?

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাবারে সহায়ক উপকরণ হিসেবে ক্যাপসিকাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ক্যাপসিকাম বেশ কয়েকটি রঙের হয়ে থাকে। মূলত আমাদের দেশে লাল ও সবুজ ক্যাপসিকাম বেশি দেখা যায়। দেশীয় সবজি না হলেও এর চাষ ধীরে ধীরে বাড়ছে এই দেশে। সবজি হিসেবে চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাল ও সবুজ ক্যাপসিকামের মধ্যে কোনটি বেশি উপকারী? এ বিষয়ে কথা হয় পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার আলোর সঙ্গে।]



লাল ক্যাপসিকাম
লাল ও সবুজ ক্যাপসিকামের মধ্যে লালটি বেশি পুষ্টিগুণসম্পন্ন। এতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। লাল ক্যাপসিকামটি খেলে ত্বকের স্বাভাবিকতা বজায় থাকে। চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। চোখ ভালো থাকে। এতে কোলেস্টেরল কম থাকার কারণে মোটা হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
ত্বক পরিষ্কার রাখতে ক্যাপসিকাম বেশ উপকারী। ত্বকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রোগের ক্ষেত্রে ক্যাপসিকাম রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে ত্বকের ব্রণ ও র‍্যাশের হাত থেকে রক্ষা করে। লাল ক্যাপসিকাম যেকোনো ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। ক্যাপসিকাম খেলে মাথার তালুর রক্ত চলাচল বজায় রাখতে সাহায্য করে। নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে ক্যাপসিকাম। খনিজের অভাব পূরণ করে। পটাশিয়াম বেশি থাকার কারণে বয়স্কদের জন্য লাল ক্যাপসিকাম খাওয়াই ভালো। বিভিন্ন উপকরণ বেশি থাকার কারণে বাজারে লাল ক্যাপসিকামের চাহিদা তুলনামূলক বেশি।
সবুজ ক্যাপসিক্যাম
সবুজ ক্যাপসিকামও বিভিন্ন পুষ্টি উপকরণে ভরপুর। এই ক্যাপসিকামটি একটু অল্পবয়সীদের জন্য উপকারী। এ ক্যাপসিকামে ক্যাপসাইসিনস নামক উপাদান ডিএনএর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংযুক্ত হওয়াতে বাধা দেয়। এটি ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। এটি মাইগ্রেন, সাইনাস, ইনফেকশন, দাঁতে ব্যথা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ইত্যাদি ব্যথা দূর করতে কাজ করে। সবুজ ক্যাপসিকাম শরীরের বাড়তি ক্যালরি পূরণে কাজ করে। ফলে উচ্চ চর্বি জমে না, একই সঙ্গে ওজনও বৃদ্ধি পায় না। সবুজ ক্যাপসিকাম রক্তের অণুচক্রিকা উদ্দীপিত করে সংক্রমণ রোধ করে থাকে।
গ্রন্থনা: তারিকুর রহমান খান 

Saturday, November 18, 2017

শীত ঋতুতে "শিশুদের সুস্থ "রাখার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিই


শীত ঋতুতে "শিশুদের সুস্থ "রাখার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিই

অন্য সময়ের চেয়ে শীতের আবহাওয়ায়
শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে একটু বেশিই চিন্তা করেন অভিভাবকরা। নিজের আদরে শিশুটিকে সুস্থ রাখতে চোখেরঘুমও হারাম করেন অনেক বাবা-মা। কারণ শিশুরা অসুস্থ হলে বাবা-মাকে রাত জাগতে হয়, ডাক্তার দেখাতে হয় ও ওষুধ খাওয়াতে হয়।  এক কথায় আপনার কাজ বেড়ে  যায়। আপনার সামান্য সচেতনতাই পারে শীতে শিশুর শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ থেকে বাচাতে। সচেতনথাকলেই শীতেও ভালো থাকবে আপনার আদরের শিশু।

তিনি বলেন, অন্যান্য ঋতুর চেয়ে শীতে শিশুদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে বেশি সচেতন থাকতে হবে। শীতে শিশুদের যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখাদেয় তা হল- সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা, টনসিল বড় হওয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। তবে সচেতন হলে এসব সমস্যা সহজেই এড়িয়ে চলা যায়।
আসুন জেনে নিই শীতে কীভাবে নেবেন শিশুর যত্ন
গোসলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার
শীতে শিশুকে ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে গোসলের সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। গোসলের সময় স্যাভলন, ডেটল বা এ ধরনেরজীবাণুনাশক দেয়া উচিত নয়।
ময়েশ্চারাইজ
শীতে শিশুর ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার আবশ্যক। গোসল করানোর পর কোমল টাওয়েল দিয়ে শরীর মোছার পর অলিভ অয়েল ও ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ তেল গায়ে মাখতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে- লাগানো তেল বা লোশন যেন সুগন্ধি, অ্যালকোহল ও অন্যান্য কেমিক্যালমুক্তহয়।
ডায়াপার পরিবর্তন
শীতে শিশুদের ডায়াপার ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হবে।।ভেজা ডায়াপার দীর্ঘক্ষণ পরে থাকলে শিশুর অ্যালার্জির সমস্যাও হতে পারে।
সবসময় শীতের পোশাক নয়
শিশুকে সবসময় শীতের পোশাক পরিয়ে রাখা ঠিক নয়।কাপড়-চোপড় যেন আবহাওয়া বা বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানানসই হয়।তবে শিশুদের ত্বকভালো রাখতে সুতি কাপড়ের বিকল্প নেই। ত্বক নরম রাখতেও সুতি কাপড় ব্যবহার করুন।
পেট্রোলিয়াম জেলি অলিভ অয়েল
ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে পেট্রোলিয়াম জেলি ও অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করুন। গোসলের পর সামান্য পরিমাণ পেট্রোলিয়াম জেলি হাতে নিয়েহালকা করে শিশুর ত্বকে লাগিয়ে দিন। এ ছাড়া গায়ে অলিভ অয়েল মাখাতে পারেন। 
ঠাণ্ডায় নাক বন্ধ হলে
ঠাণ্ডা লেগে অনেক সময় শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একে ক্ষেত্রে ‘নরসল নসল ড্রপ’ দিনে দুবার দেওয়া যেতে পারে।

 শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা.মানিককুমার তালুকদার (শিশু বিশেষজ্ঞ)।



Friday, November 3, 2017

"পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার"রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্যকরে

ভিটামিন বা খনিজ উপাদান গুণে সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল কলা। বিশেষজ্ঞরা জানান, মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে কলা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত- যারা নিয়মিত কলা খান তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। দিন কয়েক আগে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের একদল গবেষক জানিয়েছেন, পটাশিয়াম হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খনিজ উপাদান। এ ছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও ভূমিকা রয়েছে এই পটাশিয়ামের।
গবেষকরা আরো জানিয়েছেন, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া যারা নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ২৭ শতাংশ কম থাকে। কলার মধ্যে এই খনিজ উপাদানের গুণ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দিনে ৩ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম থেকে ৪ হাজার ৭০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম প্রয়োজন। একটি কলায় কম করে ৪৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পটাশিয়াম থাকে। অর্থাৎ দৈনিক পটাশিয়ামের চাহিদা মেটাতে পারে একটি কলা। কলা ছাড়াও আলু, অঙ্কুরিত ছোলা, মাছ, পোল্ট্রিজাত দ্রব্যে পটাশিয়াম থাকে। কলার পাশাপাশি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এইসব খাবার খেলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।  
এছাড়া পটাশিয়ামের যোগানের পাশাপাশি কলা হজম করতে সাহায্য করে। ফাইবার সম্বৃদ্ধ কলা ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। তবে বেশি কলা খেলে পেটে ব্যথা বা ডায়রিয়াজনিত সমস্যা হতে পারে।

Tuesday, October 24, 2017

লিভার কোথায় আছে এবং কী কাজ করে

লিভার শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্ববৃহত অঙ্গ। শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন সুস্থ লিভার। লিভারকে বলা হয় শরীরের পাওয়ার হাউজ যা জীবন ধারনের জন্য অপরিহার্য। তাই লিভারের অসুস্থতার ফলাফল ক্ষেত্র বিশেষে হতে পারে ব্যাপক ও ভয়াবহ।
 
লিভার কোথায় আছে এবং কী কাজ করে
লিভার মানব শরীরের সবচেয়ে বড় সলিড অর্গান। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে লিভারের ওজন ১ থেকে ১.৫০ কেজি। লিভারকে আল্লাহপাক পাওয়ার স্টেশন হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। যেমন ধরুন বিদ্যুৎ এর বাতি জ্বলতে হলে পাওয়ার সাপ্লাই লাগে, তেমনি আমাদের সব ক’টি যন্ত্রপাতি চলাচলের জন্য শক্তির উত্স হলো লিভার।
 
আমাদের মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি ইত্যাদি সব ক’টি যন্ত্রের সুষ্ঠু কাজের ক্ষমতা নির্ভর করে লিভার থেকে নির্গত শক্তির ওপর। আমরা যা খাই, যেমন:শর্করা, আমিষ, চর্বিজাতীয় পদার্থ, খনিজদ্রব্য ইত্যাদি সব ভেঙ্গে একমাত্র লিভারই প্রক্রিয়াজাত করে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উপাদানগুলোকে শরীরের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে, নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে লিভার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সরবরাহ করে। সেজন্য আল্লাহপাক লিভারকে একটি বিরাট মহাবিস্ময়কর কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি হিসেবে সৃষ্টি করে পেটের মধ্যে স্থাপন করেছেন।
 
মানুষের রক্তের মধ্যে Coagulation Factors নামে প্রবাহিত অসংখ্য কেমিক্যালস রয়েছে, যা রক্তকে সঞ্চালিত রাখে। সব ক’টি Coagulation Factors শুধু লিভার থেকে তৈরি হয়। রক্তের সঞ্চালন এবং জমাট বাঁধার ক্ষমতা একমাত্র লিভারের কার্যক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। আমরা যা কিছু খাই, সেই খাবারগুলো পরিপাকতন্ত্রে প্রাথমিক হজমের জন্য পিত্তরস অপরিহার্য। পিত্তরস ছাড়া খাদ্যবস্তু হজম সম্ভব নয়। এই পিত্তরস শুধু লিভার কোষ তৈরি করে।
 
আপদকালীন ব্যবহারের জন্য ভিটামিন এ, ডি, ই-কে লিভারে জমা থাকে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি লিভারে জমা থাকে। মোট কথা, লিভার এতসব কাজ করে থাকে যা বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যায় না এবং এমন সব কাজ করে যা আমরা জানি না। 
লিভারের যেসব অসুখ হয়
আমাদের দেশে লিভারের যে রোগগুলো হয়ে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ১. ভাইরাল হেপাটাইটিস (যা জন্ডিস নামে পরিচিত) ২. লিভার সিরোসিস ৩. লিভার ক্যান্সার ৪. লিভারের ফোঁড়া ৫. পিত্তথলির বা পিত্তনালীর রোগ ৬. লিভারের জন্মগত ও মেটাবলিক রোগ ইত্যাদি।
 
লিভারে অসুখের লক্ষণগুলো
উল্লেখযোগ্য, লিভারের অসুখের লক্ষণাদি সহসাই প্রকাশ পায় না, কারণ লিভারের ১১ ভাগের একভাগ অংশ যদি কারও ভালো থাকে, তবে লিভারের অসুখ প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। আল্লাহতায়ালা এত বিশাল পরিমাণ Capacity দিয়ে লিভার তৈরি করেছেন যে, খুব ক্ষতিগ্রস্ত না হলে লিভারের রোগ বোঝা যায় না। লিভারের অসুখ-বিসুখের মধ্যে প্রধানতম রোগ হলো ভাইরাল হেপাটাইটিস যা সাধারণের মাঝে জন্ডিস নামে অধিক পরিচিত। আমাদের দেশে ঘরে ঘরে যে জন্ডিস দেখা যায় বা মহামারি আকারে যে জন্ডিস হয় তা একটি ভাইরাস পরিবার দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে।
 
এই ভাইরাস পরিবারকে নামকরণ করা হয়েছে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই। এই ভাইরাসগুলোকে মূলত দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন: (ক) পানি ও খাদ্যবাহিত ভাইরাস, যথাক্রমে হেপাটাইটিস ‘এ’ ও হেপাটাইটিস ‘ই’ এবং (খ) রক্ত কিংবা দূষিত সিরিঞ্জ সুচের মাধ্যমে বাহিত ভাইরাস, যথা:হেপাটাইটিস বি, সি ও ডি।
 
দূষিত পানি কিংবা খাদ্যবস্তু গ্রহণের ২ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে হেপাটাইটিস এ এবং ই দ্বারা আক্রান্ত হলে লক্ষণ দেখা যায়। অপরদিকে হেপাটাইটিস বি এবং সি রোগের লক্ষণ দূষিত রক্ত কিংবা সিরিঞ্জের মাধ্যমে রোগ সংক্রমিত হওয়ার ৪ থেকে ৬ মাসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। রোগের লক্ষণ দিয়ে বোঝার উপায় নেই কোনো ভাইরাস দ্বারা জন্ডিস হয়েছে। জন্ডিসের অন্যতম লক্ষণ হলো:হঠাৎ করে বমিভাব, কিংবা তীব্র বমি হওয়া। খাদ্য গ্রহণে অরুচি, অনীহা কিংবা তীব্র দুর্বলতা, কখনও কখনও জ্বর জ্বর ভাব বা জ্বরের মাধ্যমেও রোগের সূত্রপাত হতে পারে।
 
এ অবস্থায় প্রশ্ন হলো, আপনি করবেন কী? আমাদের দেশে জন্ডিসের চিকিৎসা মহাবিভ্রাটে ঘোরপাক খাচ্ছে। কারণ জন্ডিস হয়েছে শুনলে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই একেকটা পরামর্শ প্রদান করেন। সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
 
ভাইরাল হেপাটাইটিসের প্রথম চিকিৎসা
ক. শরীরের পরিপূর্ণ বিশ্রাম এবং খ. স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া চালিয়ে যাওয়া। অনেকে মনে করেন, জন্ডিস হয়েছে তাই এখন বেশি বেশি ফলের রস ও পানি খেতে হবে এবং হলুদ মরিচ খাওয়া যাবে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল, আমি বলব জন্ডিস হলে রোগীকে হলুদ, মরিচ, তরিতরকারি, মাছ-মাংস ইত্যাদি স্বাভাবিক খাবার খেতে দিন। ফল ডাবের পানি, আখের রস ইত্যাদি খাওয়াবেন না। ঘন ঘন গোসল করাবেন না। জনমনে আরও কুসংস্কার রয়েছে, যেমন: নাকে নস্যি দেয়া কিংবা লতাপাতা খাওয়ানো, এসব চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। নাকে নস্যি দেয়ার ফলে অনেকে মারাত্মক সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আমাদের কাছে আসেন। জন্ডিস হওয়ার ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে যদি রোগের লক্ষণ ভালো না হয়, তবে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। জন্ডিস হওয়ার পর কেউ অস্থিরতা, অস্বাভাবিক আচরণ করলে বা অজ্ঞান হলে, এটা মারাত্মক জরুরি অবস্থা। তাকে অনতিবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
 
ক্রনিক হেপাটাইটিস
লিভারের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের ফলে যেসব রোগ হয়ে থাকে তাকে ক্রনিক হেপাটাইটিস বলে। বাংলাদেশে ক্রনিক হেপাটাইটিসের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। রোগী প্রাথমিক অবস্থায় বুঝতেই পারেন না কখন তিনি বি অথবা সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে কখনও কোনো কারণে রক্ত পরীক্ষা করলে হঠাৎ হেপাটাইটিস বি অথবা হেপাটাইটিস সি ভাইরাস ধরা পড়ে।
 
হেপাটাইটিস বি এবং সি সংক্রমণ মাসের পর মাস ধরে চলতে থাকলে আপনার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রথম পর্যায়ে সচেতন না হলে বোঝার কোনো উপায় নেই। লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে আস্তে আস্তে রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন: দুর্বলতা, খাওয়ার প্রতি অনীহা, শরীরের ওজন কমে যাওয়া কিংবা জন্ডিস প্রকাশিত হওয়া। এরপরও যদি রোগী বুঝতে না পারেন তাহলে ক্রমান্বয়ে পেটে ও শরীরের অন্যান্য অংশে পানি আসবে। এ অবস্থায় লিভারের অবস্থা মারাত্মক হয়ে যায় এবং লিভার সিরোসিসে রূপ নেয়। সময় থাকতে চিকিৎসা শুরু করলে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসজনিত লিভার সিরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
 
লিভার ক্যান্সারের কারণ
আমাদের দেশ লিভার ক্যান্সারের মূল কারণ হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। এ দুটি ভাইরাসের সংক্রমণকে প্রতিহত করলে লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। লিভার ক্যান্সার হওয়ার আগে সিরোসিস হয় এবং এই সিরোসিস প্রতিহত করতে পারলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রাথমিক অবস্থায় খুব ছোট আকারের লিভার ক্যান্সার ধরা পড়লে তা প্রতিরোধ করা যায়। আর তা না হলে পরবর্তী সময়ে এটা মারাত্মক আকার ধারণ করে।
 
লিভারের অসুখের জন্য আপনি কতটা দায়ী?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হেপাটাইটিস ই এবং হেপাটাইটিস এ খাদ্যাভাসের জন্য হয়ে থাকে। যত্রতত্র বিক্রি হওয়া রাস্তার ধারের খোলা খাবার কিংবা আখের রস অথবা শরবত যারা খান তাদেরই এই জন্ডিস হয়। যারা শহর অঞ্চলে বসবাস করেন কিন্তু পানি না ফুটিয়ে পান করেন কিংবা গ্রামগঞ্জে টিউবওয়েলবিহীন স্থানে যারা ডোবা বা পুকুরের পানি পান করেন তারা হেপাটাইটিস এ বা ই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।
 
অন্যদিকে দূষিত সুচ কিংবা দূষিত রক্ত গ্রহণের ফলে অথবা ব্যক্তিগত ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের ফলে হেপাটাইটিস বি এবং সি জনিত লিভার রোগ হতে পারে। তাছাড়া যত্রতত্র খোলা খাবার গ্রহণের ফলে লিভারে ফোঁড়া (Liver Abscess) হতে পারে। মদ্যপান বা এলকোহল খেতে যারা অভ্যস্ত বা আসক্ত তাদের লিভারের রোগ অবশ্যম্ভাবী। যে কোনো ধরনের নেশা করলে লিভার আক্রান্ত হবেই।
 
লিভারের রোগের চিকিৎসা
এখানে উল্লেখ করতে চাই, জনগণের অনেক সংশয় রয়েছে লিভারের কঠিন রোগের চিকিৎসা কি বাংলাদেশে হবে? আমি নির্দ্বিধায় বলতে চাই এবং সবাইকে জানাতে চাই, বাংলাদেশে বর্তমানে হেপাটাইটিস বি এবং সি রোগ নির্ণয়, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং অভিজ্ঞ চিকিত্সক সবই আছেন। এজন্য অযথা হয়রানি হবেন না।
 
লিভার রোগ থেকে মুক্তির উপায়:
  • আমাদের দেশে যেসব লিভার রোগ হয় তার বেশিরভাগই প্রতিরোধযোগ্য, যেমন-হেপাটাইটিস এ এবং ই। যেখানে-সেখানে খোলা খাবার গ্রহণের অভ্যাস ত্যাগ করলেই এই দুটি রোগ হবে না।
  • হেপাটাইটিস এ রোগের টিকা এখন আমাদের দেশে পাওয়া যায়। তাই শিশুদের হেপাটাইটিস এ টিকা দিতে ভুলবেন না।
  • প্রাণঘাতী রোগ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা সর্বত্র পাওয়া যায়। তাই সব বয়সের মানুষের এ টিকা অবশ্যই নেয়া উচিত। পরিবারের কোনো সদস্যের হেপাটাইটিস বি হলে অন্য সবাইকে প্রতিষেধক টিকা নেয়া জরুরি।
  • হেপাটাইটিস সি-এর প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার হয়নি। তাই সাবধানতাই বর্তমানে এ রোগ থেকে বাঁচার উপায়।
  • রক্ত গ্রহণের আগে পরীক্ষা করে নিতে হবে হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি মুক্ত কিনা।
  • ইনজেকশন নেয়ার সময় দূষিত সুঁই ব্যবহার করবেন না।
  • সব ঝুঁকিপূর্ণ ও অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক বা আচরণ পরিহার করুন। লিভার সুস্থ রাখতে আপনার সচেতনতাই হতে পারে অতম পন্থা।
  • (অধ্যাপক মবিন খান, পরিচালক, দি লিভার সেন্টার, ঢাকা, বাংলাদেশ।)
     
    লিভার সিরোসিসে কী খাবেন, কী খাবেন না
    সিরোসিস হচ্ছে এমন একটি রোগ, যেখানে লিভারের স্বাভাবিক গঠন এবং একটা পর্যায়ে কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এ দেশে লিভার সিরোসিসের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। এ ছাড়াও ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস সি ভাইরাস, অ্যালকোহলসহ অনেক কারণেই লিভার সিরোসিস হতে পারে। লিভার সিরোসিসের অনেক কপ্লিকেশনের অন্যতম হচ্ছে এসাইটিস বা পেটে পানি আসা। এসব রোগীদের তরল এবং লবণ মেপে খাওয়াটা জরুরি। তরকারিতে যতটুকু লবণ দেয়া হয়, তার বেশি লবণ এ ধরনের রোগীদের খাওয়া উচিত নয়। অনেকের ধারণা, লবণ ভেজে খেলে সমস্যা নেই। এ ধারণাটা মোটেও ঠিক নয়, কারণ সমস্যাটা আসলে লবণে নয়, বরং সোডিয়ামে। এ সোডিয়াম আমরা মূলত দু’ভাবে খেয়ে থাকি। একটি হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাওয়ার লবণ, আর অন্যটি সোডিয়াম বাইকার্বোনেট বা বেকিং পাউডার। সেজন্যই এসাইটিসের রোগীদের বেকারি আইটেম যেমন বিস্কুট, কেক ইত্যাদি এবং ফিজি ড্রিঙ্কস যেমন কোক, পেপসি ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত। এসাইটিসের রোগীরা যদি বেশি বেশি তরল পান করেন বা সোডিয়ামযুক্ত খাবার খান, তাহলে তাদের পেটের পানি বাড়বে বই কমবে না।
     
    লিভার সিরোসিসের আরেকটি মারাত্মক কমপ্লিকেশন হলো হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি বা হেপাটিক কোমা। সহজ কথায় বলতে গেলে, অপ্সান হয়ে যাওয়া। প্রাণিজ আমিষ যেমন মাছ-মাংস, ডিম-দুধ ইত্যাদি খুব বেশি পরিমাণে খেলে রক্তে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে রোগীর অপ্সান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই ডিকম্পেনসেটেড বা এডভান্সড লিভার সিরোসিসের রোগীদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তবে প্লান্ট প্রোটিন যেমন ডাল এ ধরনের রোগীদের জন্য নিরাপদ। তাই বলে অতিরিক্ত সতর্ক হতে গিয়ে প্রাণীজ আমিষ একেবারেই বাদ দিলে চলবে না। সেক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যেয়ে কিডনি ফেইলিওর হতে পারে। বিশেষ করে যেহেতু এ ধরনের রোগীদের কিডনি এমনিতেই নাজুক অবস্থায় থাকে এবং তারা হেপাটোরেনাল সিনড্রোম নামক মারাত্মক ধরনের কিডনি ফেইলিওরের ঝুঁকিতে থাকেন।
     
    পাশাপাশি লিভার সিরোসিসের রোগীদের বাইরের খাবার এবং ফুটানো নয় এমন পানি খাবার ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ তাদের লিভারে যদি হেপাটাইটিস এ বা ই ভাইরাসের মতো পানি ও খাদ্যবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ হয় তবে তাদের খুব সহজেই একিউট অন ক্রনিক লিভার ফেইলিওরের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
     
    লিভার সিরোসিস এবং আরও সহজভাবে বলতে গেলে লিভারের যে কোনো রোগীরই অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। অ্যালকোহল নিজেই অ্যালকোহলিক লিভার সিরোসিস করতে পারে। পাশাপাশি যারা অ্যালকোহল গ্রহণ করেণ তাদের লিভার অ্যাবসেস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। গবেষণায় এও দেখা গেছে যে, অ্যালকোহল গ্রহণ করলে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসজনিত লিভার রোগের মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পায়।
     
    এইচবিএস এজি পজিটিভ যকৃতের সমস্যা
     
    কেস হিস্ট্রি-১
    শাহজাহান শিক্ষিত বেকার যুবক। চাচাতো ভাই মহীউদ্দিন সৌদি আরবে ১০ বছর ধরে চাকরি করছেন। মহীউদ্দিনের সহযোগিতায় সৌদি আরবে চাকরির জন্য ৭০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন তিনি। ভিসার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে রক্তের পরীক্ষায় এইচবিএসএজি (HBs Ag) ধরা পড়ে। এ কি নতুন কোনো রোগ? শাহজাহান এইচবিএস নেগেটিভ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। আবার রক্ত পরীক্ষা, কবিরাজের ঔষধ, পানি পড়া, তাবিজ-কবজ, আমের রস, যে যা বলছেন, তাই করছেন তিনি। কিন্তু না, এইচবিএস এজি কমছে না। হতাশ হয়ে ওঠেন এই ২৬ বছরের যুবক। ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে মহাবিপদে পড়েন তিনি। কী করবেন বুঝতে পারেন না।
     
    কেস হিস্ট্রি-২
    তমাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সহপাঠীদের সঙ্গে সন্ধানীতে রক্ত দিতে গিয়ে শনাক্ত হলো এইচবিএস পজিটিভ। তাই তাঁর রক্ত অন্য কারও জন্য সংগ্রহ করা হলো না। তমাল দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে
     
    কেস হিস্ট্রি-৩
    এহবুব সাহেবের ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। স্কুলের হেপাটাইটিস-বি টিকা গ্রহণ কর্মসূচির আওতায় মেয়েটির রক্ত পরীক্ষায় শনাক্ত হয় এইচবিএস এজি পজিটিভ।যে কেস হিস্ট্রিগুলো বলা হলো, তার সম্মুখীন আমরা প্রতিনিয়তই হচ্ছি। এইচবিএস পজিটিভ বলতে কী বোঝায়, কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, কী তার চিকিৎসা ইত্যাদি নিয়ে আজকের উপস্থাপন।
     
    লিভারের রোগ হলে কি করবেন
    লিভারের রোগীর কোন উপসর্গ দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে অথবা আপনার শরিরে ভাইরাসের সংক্রমন নিশ্চিত হলে দেরী না করে বিশেষজ্ঞ চিকিতসকের পরামর্শ নিন। এক্ষেত্রে সব চেয়ে ভাল হয় লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। তিনি আপনার রোগ নির্ণয় করে এর কারণ, রোগের জন্য সৃষ্ট জটিলতা এবং রোগের বর্তমান অবস্থা জেনে প্রয়োজনীয় চিকিতসা ও উপদেশ দিবেন। হেপাটাইটিস এ ও ই জনিত রোগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাল হয়ে যায়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে জটিলতাও দেখা দিতে পারে। হেপাটাইটিস ই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৮% গর্ভবতী মা মারা যায়। যখন শেষ তিনমাসের সময় মা তীব্রভাবে হেপাটাইটিস ই প্রদাহে ভোগেন। অন্যদের ক্ষেত্রে জীবন সংহারী একিউট হেপাটিক ফেইলিউর নামক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই জন্ডিস কে কখনও অবহেলা করবেন না। ক্রনিক হেপাটাইটিসের জন্য দায়ী হেপাটাইটিস বি ও সি এর বিরুদ্ধে কার্যকর ঔষধ গুলির সবই এখন আমাদের দেশে পাওয়া যায়। তাই এ ক্ষেত্রেও হতাশ না হয়ে লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
     
    লিভার রোগ প্রতিরোধে আপনার করণীয়:
    • হেপাটাইটিস বি এর টীকা নিন;
    • ঝুঁকিপূর্ণ আচারণ যেমন-অনিরাপদ যৌনতা, একই সুঁই বা সিরিন্‌জ বহুজনের ব্যবহার পরিহার করুন;
    • নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন ও ডিজপজেবল সুঁই ব্যবহার করুন। ব্লেড, রেজার, ব্রাশ; খুর বহু জনে ব্যবহার বন্ধ করুন;
    • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রন করুন;
    • শাক সবজি ও ফলমূল বেশি করে খান আর চর্বি যুক্ত খাবার কম খান;
    • মদ্যপান ও অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করুন;
    • বিশুদ্ধ পানি ও খাবার গ্রহন করুণ;
    • ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রনে রাখুন;
    • পরিস্কার পরিছন্ন থাকুন।
    শেষ কথাঃ
    মানুষের দেহে লিভার মাত্র একটিই আছে এবং জীবন ধারনের জন্য এটি অপরিহার্য। তাই লিভারের অসুস্থতার ফলাফল ক্ষেত্র বিশেষে হতে পারে ব্যাপক ও ভয়াবহ। তবে লিভারের রোগ মানেই সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ন নিরাময় এবং অনিরাময় যোগ্য জটিলতা মুক্ত মোটামুটি স্বাভাবিক ভাবে জীবন নির্বাহ করা যায়।
     
    লিভার অকেজো হবার ১০টি প্রধান কারণ
    লিভার অকেজো হবার ১০টি প্রধান কারণ এখানে তুলে ধরা হলো:
    ১) রাতে খুব দেরিতে ঘুমাতে যাওয়া ও সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা;
    ২) সকালে মূত্রত্যাগ ও পর্যাপ্ত পানি পান না করা;
    ৩) অতিরিক্ত খাবার খাওয়া;
    ৪) সকালে নাস্তা না করা;
    ৫) মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ সেবন করা;
    ৬) প্রিজারভেটিভ, ফুড কালার ও খাবার মিষ্টি করতে কৃত্রিম সুইটেনার ব্যবহার করা খাবার বেশি খাওয়া;
    ৭) রান্নায় অস্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করা;
    ৮) ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবার খাওয়া ও ভাজার সময় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করা;
    ৯) মাত্রাতিরিক্ত যে কোন কিছুই ক্ষতিকর। খুব বেশি পরিমাণে কাঁচা খাদ্য খাওয়ার অভ্যাসও লিভারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে;
    ১০) অ্যালকোহল সেবন করা।
     
    তথ্য: 
    তথ্য আপা প্রকল্প

কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা

তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ আবার খাবারের সময় অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ নিয়ে রুচিসহকারে খেতে থাকেন। তাঁদের জন্য আরও সুখ...