"কোমরের" ব্যথা

বেশীরভাগ মানুষই জীবনের কোনো না-কোন সময় কোমর ব্যথাজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। আমাদের দেশে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে চার জন জীবনের কোন না-কোন সময়ে এই সমস্যায় ভুগেন। কোমর ব্যথার কারণ: কোমর ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ ভাগ হচ্ছে ‘মেকানিক্যাল সমস্যা’। মেকানিক্যাল সমস্য বলতে মেরুদন্ডের মাংসপেশি, লিগামেন্ট মচকানো, আংশিক ছিড়ে যাওয়া, দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক সমস্যা, কশেরুকার অবস্থানের পরিবর্তন ও মেরুদন্ডের নির্দিষ্ট বক্রতার পরিবর্তনকে বোঝায়। চলাফেরা, জীবিকার ধরন, খুব বেশী ভার বা ওজন বহন, মেরুদন্ডের অতিরিক্ত নড়াচড়া, একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে কোনো কাজ করা, মেরুদন্ডে আঘাত পাওয়া সর্বোপরি কোমরের অবস্থানগত ভুলের জন্য হয়ে থাকে। অন্যান্য কারণের মধ্যে বয়সজনিত মেরুদন্ডে ক্ষয় বা বৃদ্ধি, অস্টিওআথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত, অস্টিওপোরোসিস, এনকাইলজিং স্পনডাইলোসিস, মেরুদন্ডের স্নায়বিক সমস্যা, টিউমার ক্যান্সার, বোন টিবি, কোমরের মাংসপেশির সমস্যা, পেটের বিভিন্ন ভিসেরার রোগ বা ইনফেকশন, বিভিন্ন স্ত্রীরোগজনিত সমস্যা, মেরুদন্ডের রক্তবাহী নালির সমস্যা, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, মেদ বা ভুঁড়ি অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি। উপসর্গ কোমরের ব্যাথা আস্তে আস্তে বাড়তে পারে বা হঠাৎ প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। নাড়াচড়া বা কাজকর্মে ব্যাথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। ব্যাথা কোমরে থাকতে পারে বা কোমর থেকে পায়ের দিকে নামতে পারে অথবা পা থেকে কোমর পর্যন্ত উঠতে পারে। অনেক সময় কোমর থেকে ব্যাথা মেরুদন্ডের পেছন দিক দিয়ে মাথা পর্যন্ত উঠতে পারে। রোগী অনেকক্ষণ বসতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ব্যাথার সঙ্গে পায়ে শিন-শিন বা ঝিন- ঝিনজাতীয় ব্যথা নামতে বা উঠতে পারে, হাঁটতে গেলে পা খিচে আসে বা আটকে যেতে পারে, ব্যথা দুই পায়ে বা যেকোনো এক পায়ে নামতে পারে। অনেক সময় বিছানায় শুয়ে থাকলে ব্যাথা কিছুটা কমে আসে। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে রোগীর কোমর ও পায়ের মাংসপেশির ক্ষমতা কমে আসে এবং শুকিয়ে যেতে পারে, সর্বোপরি রোগী চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যেহেতু আধুনিক এই যুগেও কোমর ব্যথা একটি আন্তর্জাতিকভাবে ¯^xK…Z ¯^v¯’¨ সমস্যা; তাই এ সমস্যার সমাধানে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। প্রতিকার মেডিসিন: চিকিৎসকরা রোগীকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সাধারণত ব্যথানাশক এনএসএআইডিএস গ্রুপের ওষুধ, মাসল্ রিলাক্সজেন ও সেডেটিভজ- জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করে থাকেন। অনেক সময় মেরুদন্ডের ভেতর স্টেরয়েড- জাতীয় ওষুধও প্রয়োগ করে থাকেন। যেহেতু ওয়ুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে সেজন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করা আবশ্যক। এই চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসক রোগীকে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন,12pt; line-height: 130%; font-family: ‘Siyam Rupali’”> আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, jv¤^vi ট্রাকশন ও বিভিন্ন ব্যায়াম দিয়ে থাকেন। তা ছাড়া চিকিৎসা চলা অবস্থায় কোমরে নির্দিষ্ট অর্থোসিস বা ব্রেস প্রয়োগ করে থাকেন। তবে এই জাতীয় চিকিৎসা যেখানে সেখানে না করাই ভাল। সার্জারি: যদি দীর্ঘদিন মেডিসিন চিকিৎসা চালানোর পরও রোগীর অবস্থার পরিবর্তন না হয় রোগীকে অবস্থা অনুযায়ী কোমর-মেরুদন্ডের অপারেশন বা সার্জারীর প্রয়োজন হয়। এ জাতীয় সার্জারী সাধারণত নিউরো বা অর্থোসার্জন করে থাকেন। সার্জারীর পরবর্তীতে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশমত নির্দিষ্ট ব্যায়াম দীর্ঘ দিন চালিয়ে যেতে হয়। প্রতিরোধ: কোমর ব্যথা উপরে উল্লিখিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে ভালো হওয়ার পরও আবার দেখা দিতে পারে। যেহেতু কোমর ব্যথা বারবার দেখা দিতে পারে বা যারা এখনো এ জাতীয় সমস্যায় ভোগেননি, তারা নিচের পরামর্শ মেনে চলতে পারেন। তবে ব্যায়াম করার আগে আপনার জন্য কী ব্যায়াম, তার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ ভুল ব্যায়ামের কারণে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম শুরুর আগে কিছু স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। ¨ পায়ের কাফ মাসল্ বা মাংসপেশির স্ট্রেচিং: দেয়ালের কোণে গিয়ে এক পা সামনে এক পা পেছন দিয়ে দাঁড়ান। পেছনের হাঁটু সোজা রেখে সামনে ঝুঁকে দুই হাত দিয়ে সামনের দুই পাশের দেয়ালে ধাক্কা দিন। এতে পায়ের কাফ মাসল্ে টান পড়বে। ¨ কোয়াড্রিসেপস বা উরুর সামনের মাংসপেশির স্ট্রেচিং: সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যেকোনো এক হাঁটু ভাঁজ করে ওই পায়ের গোড়ালি wbZ‡¤^i সঙ্গে লাগাতে চেষ্টা করুন। এতে ঊরুর সামনের মাংসপেশিতে টান পড়বে। ¨ হ্যামস্ট্রিং বা ঊরুর পেছনের মাংসপেশি স্ট্রেচিং: টুল বা বেঞ্চের ওপর এক পা সোজা করে রেখে পায়ের পাতা এক হাত দিয়ে নিজের দিকে টানতে হবে। এতে ঊরুর পেছনের মাংসপেশিতে টান লাগবে। ¨ নিতম্ব বা হিপের সামনের মাংসপেশির স্ট্রেচিং: ডান হাঁটু ভাঁজ করে বসে বাম পায়ের পাতা সোজাভাবে ফ্লোরে রাখুন। এরপর সামনে ঝুঁকুন। একইভাবে অন্য পায়ের জন্য করুন। এতে wbZ‡¤^i সামনের মাংসপেশি টান হবে। ¨ ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ড স্ট্রেচিং: এক পায়ের সামনে অন্য পা ক্রস করে চাপ দিন। এতে ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ডে টান পড়বে। অবস্থাগত কোমর ব্যথা সায়াটিকা রোগ বা ডিস্ক প্রলেপস রোগের ব্যায়াম: প্রথমে সতর্কতার সঙ্গে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার কনুইয়ের ওপর ভর করে বুক ও মাথা খুব ধীরে ধীরে ওপরে ওঠান। প্রতিবেলায় ছয় বার করুন। উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এ অবস্থা থেকে দুই হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে মাথা ও বুক তুলুন, যেন তলপেট বিছানায় লাগানো থাকে। পাঁচ সেকেন্ড এভাবে থাকুন ব্যায়ামটি ১০ বার করুন। উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটি কোমরের পেছনে রাখুন। এ অবস্থায় নিচের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে মাথা ও বুক ওপরের দিকে ওঠান। পাঁচ সেকেন্ডে রাখুন। আস্তে আস্তে নামান। দিনে দুই বেলা পাঁচ থেকে ১০ বার করুন। উপড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। বুক ও মাথা মেঝের সঙ্গে লাগিয়ে রাখুন। এবার দুই হাত একসঙ্গে দু-তিন ইঞ্চি উঠিয়ে কয়েক সেকেন্ড রাখুন। এবার ডান হাত ও বাম পা একসঙ্গে উঠিয়ে কয়েক সেকেন্ড রাখুন, এবার নামিয়ে ফেলুন। একইভাবে বাম হাত ও ডান পা উঠিয়ে নামিয়ে ফেলুন। স্পন্ডাইলসিস, মাংসপেশি বা লিগামেন্টজনিত সমস্যা, স্নায়বিক সমস্যাজনিত ব্যায়াম: চিৎ হয়ে শুয়ে হাত দুটো ভাঁজ করে বুকের ওপর রাখুন, হাঁটু দুটি ভাঁজ করুন। এবার আস্তে আস্তে মাথা, কাঁধ ও পিঠ ফ্লোর বা বিছানা থেকে ওপরে তুলুন, বেশি ওপরে তুলবেন না। (যাদের ঘাড়ে ব্যাথা আছে তারা ও ব্যায়ামটি করার সময়ে মাথার পেছনে হাত রাখুন)। চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার ডান পা ভাঁজ করে বুকের কাছে নিয়ে আসুন, পা সোজা করে আস্তে আস্তে নামিয়ে ফেলুন। একইভাবে অন্য পায়ের জন্য করুন। তৃতীয় ব্যায়ামটি আগের ব্যায়ামের মতো একটি ব্যায়াম। সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে পেছনে ঝুঁকুন। এবার ধীরে ধীরে সোজা হন। অ্যারোবিক ব্যায়াম: স্ট্রেচিং ব্যায়াম ও নির্দিষ্ট ব্যায়াম ছাড়াও মেরুদন্ডের সুস্থতা ও কোমর ব্যথার জন্য প্রয়োজন অ্যারোবিক ব্যায়াম। যেমন- সাঁতার কাটা। নিয়মিত হাঁটা। আস্তে আস্তে দৌড়ানো। দৈনন্দিন কাজে সতর্কতা নিচ থেকে কিছু তোলার সময়: কোমর ভাঁজ করে কিংবা ঝুঁকে তুলবেন না। হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন। কোন কিছু বহন করার সময়: ঘাড়ের ওপর কিছু তুলবেন না। ভারী জিনিস শরীরের কাছাকাছি রাখুন। পিঠের ওপর ভারী কিছু বহন করার সময় সামনের দিকে ঝুঁকে বহন করুন। দাঁড়িয়ে থাকার সময়: ১০ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকবেন না। হাঁটু না-ভেঙে সামনের দিকে ঝুঁকবেন না। দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে বা দাঁড়াতে হলে উঁচু হিল পরবেন না। অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হলে কিছুক্ষণ পর পর শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে নিন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ছোট ফুট রেস্ট ব্যবহার করুন। যানবাহনে চড়ার সময়: গাড়ি চলানোর সময় স্টিয়ারিং হুইল থেকে দূরে সরে বসবেন না। সোজা হয়ে বসুন। ভ্রমণে ব্যাথা সময় jv¤^vi করসেট ব্যবহার করুন। বসে থাকার সময়: আপনার চেয়ারটি টেবিল থেকে বেশি দূরে নেবেন না। সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না। কোমরের পেছনে সাপোর্ট দিন। এমনভাবে বসুন যাতে ঊরু মাটির সমান্তরালে থাকে। নরম গদি বা সিপ্রং যুক্ত সোফা বা চেয়ারে বসবেন না। শোয়ার সময়: উপুড় হয়ে শোবেন না। ভাঙা খাট, ফোম বা সিপ্রংয়ের খাটে শোবেন না। সামন তোশক ব্যবহার করুন। বিছানা শক্ত, চওড়া ও সমান হতে হবে। শক্ত বিছানা বলতে সমান কিছুর ওপর পাতলা তোশক বিছানোকে বোঝায়। মেয়েরা যেসব নিয়মকানুন মেনে চলবেন: অল্প হিলের জুতো বা স্যান্ডেল পরুন, বিভিন্ন জুতোর হিলের উচ্চতা বিভিন্ন না হওয়াই উচিত। তরকারি কাটা, মসলা পেষা, কাপড় কাচা ও ঘর মোছার সময় মেরুদণ্ড সাধারণ অবস্থায় এবং কোমর সোজা রাখুন। কোমর ঝুঁকে বাচ্চকে কোলে নেবেন না। ঝাড় দেওয়া, টিউবওয়েল চাপার সময় কোমর সোজা রাখবেন। পানি ভরা কলস বা বালতি, ভারী আসবাবপত্র তুলতে প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করে বসবেন এবং কোমর সোজা রাখবেন। মার্কেটিং বা শপিংয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট দাঁড়ানো বা হাঁটার পরে বিশ্রামের জন্য একটু বসবেন। বিছানা গোছানোর সময় কোমর ভাঁজ না-করে বরং হাঁটু ভেঙে বসা উচিত। কোমর ব্যথা বেশি হলে বিছানা থেকে শোয়া ও ওঠার নিয়ম: চিৎ হয়ে শুয়ে এক হাঁটু ভাজ করুন। এবার অন্য হাঁটুটি ভাজ করুন। হাত দুটি বিছানায় রাখুন। এবার ধীরে ধীরে এক পাশ কাত হোন। পা দুটি বিছানা থেকে ঝুলিয়ে দিন, এবার কাত হওয়া দিকের হাতের কনুই এবং অপর হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসুন। দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে বসুন এবং মেঝেতে পা রাখুন। এবার দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে সামনে ঝুঁকে দাঁড়ান। ওজন কমান: খাদ্যাভাস পরিবর্তন করুন: গরু, খাসির মাংস, ডালজাতীয় খাবার, মিষ্টিজাতীয় খাবার, তৈলাক্ত খাবার খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে শাকসবজি, তরিতরকারি, ফলমূল খাদ্য তালিকায় বেশি করে রাখুন। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন এবং যাদের দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস আছে, তা বন্ধ করে রাতে শিগাগিরই শুয়ে পড়ুন। ডা.মো: সফিউল্যাহ্ প্রধান লেকচারার ,বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ,ঢাকা। 
বেশীরভাগ মানুষই জীবনের কোনো না-কোন সময় কোমর ব্যথাজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। আমাদের দেশে প্রতি পাঁচ জনের
মধ্যে চার জন জীবনের কোন না-কোন সময়ে এই সমস্যায় ভুগেন।
কোমর ব্যথার কারণ:
কোমর ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ ভাগ হচ্ছে ‘মেকানিক্যাল সমস্যা’। মেকানিক্যাল সমস্য বলতে মেরুদন্ডের মাংসপেশি, লিগামেন্ট মচকানো, আংশিক ছিড়ে যাওয়া, দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক সমস্যা, কশেরুকার অবস্থানের পরিবর্তন ও মেরুদন্ডের নির্দিষ্ট বক্রতার পরিবর্তনকে বোঝায়। চলাফেরা, জীবিকার ধরন, খুব বেশী ভার বা ওজন বহন, মেরুদন্ডের অতিরিক্ত নড়াচড়া, একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে কোনো কাজ করা, মেরুদন্ডে আঘাত পাওয়া সর্বোপরি কোমরের অবস্থানগত ভুলের জন্য হয়ে থাকে। অন্যান্য কারণের মধ্যে বয়সজনিত মেরুদন্ডে ক্ষয় বা বৃদ্ধি, অস্টিওআথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত, অস্টিওপোরোসিস, এনকাইলজিং স্পনডাইলোসিস, মেরুদন্ডের স্নায়বিক সমস্যা, টিউমার ক্যান্সার, বোন টিবি, কোমরের মাংসপেশির সমস্যা, পেটের বিভিন্ন ভিসেরার রোগ বা ইনফেকশন, বিভিন্ন স্ত্রীরোগজনিত সমস্যা, মেরুদন্ডের রক্তবাহী নালির সমস্যা, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, মেদ বা ভুঁড়ি অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি।
উপসর্গ
কোমরের ব্যাথা আস্তে আস্তে বাড়তে পারে বা হঠাৎ প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। নাড়াচড়া বা কাজকর্মে ব্যাথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। ব্যাথা কোমরে থাকতে পারে বা কোমর থেকে পায়ের দিকে নামতে পারে অথবা পা থেকে কোমর পর্যন্ত উঠতে পারে। অনেক সময় কোমর থেকে ব্যাথা
মেরুদন্ডের পেছন দিক দিয়ে মাথা পর্যন্ত উঠতে পারে। রোগী অনেকক্ষণ বসতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ব্যাথার সঙ্গে পায়ে শিন-শিন বা ঝিন- ঝিনজাতীয় ব্যথা নামতে বা উঠতে পারে, হাঁটতে গেলে পা খিচে আসে বা আটকে যেতে পারে, ব্যথা দুই পায়ে বা যেকোনো এক পায়ে নামতে পারে। অনেক সময় বিছানায় শুয়ে থাকলে ব্যাথা কিছুটা কমে আসে। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে রোগীর কোমর ও পায়ের মাংসপেশির ক্ষমতা কমে আসে এবং শুকিয়ে যেতে পারে, সর্বোপরি রোগী চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
যেহেতু আধুনিক এই যুগেও কোমর ব্যথা একটি আন্তর্জাতিকভাবে ¯^xK…Z ¯^v¯’¨ সমস্যা; তাই এ সমস্যার সমাধানে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
প্রতিকার
মেডিসিন: চিকিৎসকরা রোগীকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সাধারণত ব্যথানাশক এনএসএআইডিএস গ্রুপের ওষুধ, মাসল্ রিলাক্সজেন ও সেডেটিভজ- জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করে থাকেন। অনেক সময় মেরুদন্ডের ভেতর স্টেরয়েড- জাতীয় ওষুধও প্রয়োগ করে থাকেন। যেহেতু ওয়ুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে সেজন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করা আবশ্যক। এই চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসক রোগীকে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন,12pt; line-height: 130%; font-family: ‘Siyam Rupali’”> আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, jv¤^vi ট্রাকশন ও বিভিন্ন ব্যায়াম দিয়ে থাকেন। তা ছাড়া চিকিৎসা চলা অবস্থায় কোমরে নির্দিষ্ট অর্থোসিস বা ব্রেস প্রয়োগ করে থাকেন। তবে এই জাতীয় চিকিৎসা যেখানে সেখানে না করাই ভাল।
সার্জারি: যদি দীর্ঘদিন মেডিসিন চিকিৎসা চালানোর পরও রোগীর অবস্থার পরিবর্তন না হয় রোগীকে অবস্থা অনুযায়ী কোমর-মেরুদন্ডের অপারেশন বা সার্জারীর প্রয়োজন হয়। এ জাতীয় সার্জারী সাধারণত নিউরো বা অর্থোসার্জন করে থাকেন। সার্জারীর পরবর্তীতে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশমত নির্দিষ্ট ব্যায়াম দীর্ঘ দিন চালিয়ে যেতে হয়।
প্রতিরোধ: কোমর ব্যথা উপরে উল্লিখিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে ভালো হওয়ার পরও আবার দেখা দিতে পারে। যেহেতু কোমর ব্যথা বারবার দেখা দিতে পারে বা যারা এখনো এ জাতীয় সমস্যায় ভোগেননি, তারা নিচের পরামর্শ মেনে চলতে পারেন। তবে ব্যায়াম করার আগে আপনার জন্য কী ব্যায়াম, তার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ ভুল ব্যায়ামের কারণে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম শুরুর আগে কিছু স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
¨ পায়ের কাফ মাসল্ বা মাংসপেশির
স্ট্রেচিং:
দেয়ালের কোণে গিয়ে এক পা সামনে এক পা পেছন দিয়ে দাঁড়ান। পেছনের হাঁটু সোজা রেখে সামনে ঝুঁকে দুই হাত দিয়ে সামনের দুই পাশের দেয়ালে ধাক্কা দিন। এতে পায়ের কাফ মাসল্ে টান পড়বে।
¨ কোয়াড্রিসেপস বা উরুর সামনের
মাংসপেশির স্ট্রেচিং:
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যেকোনো এক হাঁটু ভাঁজ করে ওই পায়ের গোড়ালি wbZ‡¤^i সঙ্গে লাগাতে চেষ্টা করুন। এতে ঊরুর সামনের মাংসপেশিতে টান পড়বে।
¨ হ্যামস্ট্রিং বা ঊরুর পেছনের
মাংসপেশি স্ট্রেচিং:
টুল বা বেঞ্চের ওপর এক পা সোজা করে রেখে পায়ের পাতা এক হাত দিয়ে নিজের দিকে টানতে হবে। এতে ঊরুর পেছনের মাংসপেশিতে টান লাগবে।
¨ নিতম্ব বা হিপের সামনের
মাংসপেশির স্ট্রেচিং:
ডান হাঁটু ভাঁজ করে বসে বাম পায়ের পাতা সোজাভাবে ফ্লোরে রাখুন। এরপর সামনে ঝুঁকুন। একইভাবে অন্য পায়ের জন্য করুন। এতে wbZ‡¤^i সামনের মাংসপেশি টান হবে।
¨ ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ড স্ট্রেচিং:
এক পায়ের সামনে অন্য পা ক্রস করে চাপ দিন। এতে ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ডে টান পড়বে।
অবস্থাগত কোমর ব্যথা সায়াটিকা রোগ
বা ডিস্ক প্রলেপস রোগের ব্যায়াম:
প্রথমে সতর্কতার সঙ্গে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার কনুইয়ের ওপর ভর করে বুক ও মাথা খুব ধীরে ধীরে ওপরে ওঠান। প্রতিবেলায় ছয় বার করুন।
উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এ অবস্থা থেকে দুই হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে মাথা ও বুক তুলুন, যেন তলপেট বিছানায় লাগানো থাকে। পাঁচ সেকেন্ড এভাবে থাকুন ব্যায়ামটি ১০ বার করুন।
উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটি কোমরের পেছনে রাখুন। এ অবস্থায় নিচের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে মাথা ও বুক ওপরের দিকে ওঠান। পাঁচ সেকেন্ডে রাখুন। আস্তে আস্তে নামান। দিনে দুই বেলা পাঁচ থেকে ১০ বার করুন।
উপড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। বুক ও মাথা মেঝের সঙ্গে লাগিয়ে রাখুন। এবার দুই হাত একসঙ্গে দু-তিন ইঞ্চি উঠিয়ে কয়েক সেকেন্ড রাখুন। এবার ডান হাত ও বাম পা একসঙ্গে উঠিয়ে কয়েক সেকেন্ড রাখুন, এবার নামিয়ে ফেলুন। একইভাবে বাম হাত ও ডান পা উঠিয়ে নামিয়ে ফেলুন।
স্পন্ডাইলসিস, মাংসপেশি বা
লিগামেন্টজনিত সমস্যা, স্নায়বিক
সমস্যাজনিত ব্যায়াম:
চিৎ হয়ে শুয়ে হাত দুটো ভাঁজ করে বুকের ওপর রাখুন, হাঁটু দুটি ভাঁজ করুন। এবার আস্তে আস্তে মাথা, কাঁধ ও পিঠ ফ্লোর বা বিছানা থেকে ওপরে তুলুন, বেশি ওপরে তুলবেন না। (যাদের ঘাড়ে ব্যাথা আছে তারা ও ব্যায়ামটি করার সময়ে মাথার পেছনে হাত রাখুন)।
চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার ডান পা ভাঁজ করে বুকের কাছে নিয়ে আসুন, পা সোজা করে আস্তে আস্তে নামিয়ে ফেলুন। একইভাবে অন্য পায়ের জন্য করুন।
তৃতীয় ব্যায়ামটি আগের ব্যায়ামের মতো একটি ব্যায়াম। সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে পেছনে ঝুঁকুন। এবার ধীরে ধীরে সোজা হন।
অ্যারোবিক ব্যায়াম:
স্ট্রেচিং ব্যায়াম ও নির্দিষ্ট ব্যায়াম ছাড়াও মেরুদন্ডের সুস্থতা ও কোমর ব্যথার জন্য প্রয়োজন অ্যারোবিক ব্যায়াম। যেমন-
সাঁতার কাটা।
নিয়মিত হাঁটা।
আস্তে আস্তে দৌড়ানো।
দৈনন্দিন কাজে সতর্কতা
নিচ থেকে কিছু তোলার সময়:
কোমর ভাঁজ করে কিংবা ঝুঁকে তুলবেন না। হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন।
কোন কিছু বহন করার সময়:
ঘাড়ের ওপর কিছু তুলবেন না।
ভারী জিনিস শরীরের কাছাকাছি রাখুন।
পিঠের ওপর ভারী কিছু বহন করার সময় সামনের দিকে ঝুঁকে বহন করুন।
দাঁড়িয়ে থাকার সময়:
১০ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
হাঁটু না-ভেঙে সামনের দিকে ঝুঁকবেন না।
দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে বা দাঁড়াতে হলে উঁচু হিল পরবেন না।
অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হলে কিছুক্ষণ পর পর শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে নিন।
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ছোট ফুট রেস্ট ব্যবহার করুন।
যানবাহনে চড়ার সময়:
গাড়ি চলানোর সময় স্টিয়ারিং হুইল থেকে দূরে সরে বসবেন না। সোজা হয়ে বসুন।
ভ্রমণে ব্যাথা সময় jv¤^vi করসেট ব্যবহার করুন।
বসে থাকার সময়:
আপনার চেয়ারটি টেবিল থেকে বেশি দূরে নেবেন না।
সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না।
কোমরের পেছনে সাপোর্ট দিন।
এমনভাবে বসুন যাতে ঊরু মাটির সমান্তরালে থাকে।
নরম গদি বা সিপ্রং যুক্ত সোফা বা চেয়ারে বসবেন না।
শোয়ার সময়:
উপুড় হয়ে শোবেন না। ভাঙা খাট, ফোম বা সিপ্রংয়ের খাটে শোবেন না।
সামন তোশক ব্যবহার করুন।
বিছানা শক্ত, চওড়া ও সমান হতে হবে। শক্ত বিছানা বলতে সমান কিছুর ওপর পাতলা তোশক বিছানোকে বোঝায়।
মেয়েরা যেসব নিয়মকানুন মেনে চলবেন:
অল্প হিলের জুতো বা স্যান্ডেল পরুন, বিভিন্ন জুতোর হিলের উচ্চতা বিভিন্ন না হওয়াই উচিত।
তরকারি কাটা, মসলা পেষা, কাপড় কাচা ও ঘর মোছার সময় মেরুদণ্ড সাধারণ অবস্থায় এবং কোমর সোজা রাখুন।
কোমর ঝুঁকে বাচ্চকে কোলে নেবেন না। ঝাড় দেওয়া, টিউবওয়েল চাপার সময় কোমর সোজা রাখবেন।
পানি ভরা কলস বা বালতি, ভারী আসবাবপত্র তুলতে প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করে বসবেন এবং কোমর সোজা রাখবেন।
মার্কেটিং বা শপিংয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট দাঁড়ানো বা হাঁটার পরে বিশ্রামের জন্য একটু বসবেন।
বিছানা গোছানোর সময় কোমর ভাঁজ না-করে বরং হাঁটু ভেঙে বসা উচিত।
কোমর ব্যথা বেশি হলে বিছানা থেকে
শোয়া ও ওঠার নিয়ম:
চিৎ হয়ে শুয়ে এক হাঁটু ভাজ করুন।
এবার অন্য হাঁটুটি ভাজ করুন। হাত দুটি বিছানায় রাখুন।
এবার ধীরে ধীরে এক পাশ কাত হোন।
পা দুটি বিছানা থেকে ঝুলিয়ে দিন, এবার কাত হওয়া দিকের হাতের কনুই এবং অপর হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসুন।
দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে বসুন এবং মেঝেতে পা রাখুন।
এবার দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে সামনে ঝুঁকে দাঁড়ান।
ওজন কমান:
খাদ্যাভাস পরিবর্তন করুন:
গরু, খাসির মাংস, ডালজাতীয় খাবার, মিষ্টিজাতীয় খাবার, তৈলাক্ত খাবার খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে শাকসবজি, তরিতরকারি, ফলমূল খাদ্য তালিকায় বেশি করে রাখুন।
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন এবং যাদের দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস আছে, তা বন্ধ করে রাতে শিগাগিরই শুয়ে পড়ুন।
ডা.মো: সফিউল্যাহ্ প্রধান
লেকচারার ,বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ,ঢাকা।
[ ভাল লাগলে পোস্ট এ অবশ্যই লাইক

No comments:

Post a Comment

কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা

তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ আবার খাবারের সময় অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ নিয়ে রুচিসহকারে খেতে থাকেন। তাঁদের জন্য আরও সুখ...