Sunday, January 24, 2016

মুটিয়ে যাওয়ার ক্ষতি



অতিরিক্ত ওজন অনেকের জন্যই বড় সমস্যা। শিশুদের এই সমস্যা আরো বেশি। শহরবাসীর এক-তৃতীয়াংশেরই ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। অতিরিক্ত ওজন মোটেই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়; বরং এটি অনেক ধরনের অসুখবিসুখের বড় কারণ - 

হার্ট 

ওজন বেশি হলে শরীরের আকার বড় হয়। তখন হার্টকে শরীরের প্রতিটি অংশে রক্ত পাম্প করতে অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করতে হয়। এভাবে অতিরিক্ত কাজ করার জন্য ধীরে ধীরে হার্টের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমতে থাকে। মুটিয়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি। এমনটি মুটিয়ে গেলে অল্পবয়সী শিশুরাও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া মুটিয়ে যাওয়ার কারণে বাড়ে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও। 

লিভার

 সাধারণত ফ্যাটি লিভার বা যকৃতে চর্বি জমার অসুখটি বড়দের হয়। যারা উচ্চ মাত্রায় চর্বিযুক্ত খাবার খায়, অ্যালকোহল সেবন করে, তাদের বেশি হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত শারীরিক ওজনের শিশুরাও ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে মুটিয়ে যাওয়া শিশুরা পেট ব্যথা, বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন, শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছে। মনে রাখা দরকার, ফ্যাটি লিভারের সঙ্গে লিভার ক্যান্সার ও লিভার সিরোসিসের মতো প্রাণঘাতী অসুখের সম্পর্ক আছে। 

পিত্তথলির পাথর 

পিত্তথলির পাথর আসলে থলির ভেতরে থাকা কোলেস্টেরলের জমে যাওয়া শক্ত অংশ। যেসব শিশুর ওজন বেশি, তাদের এই রোগটি হতে দেখা যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পিত্তথলির পাথর বেশি হয়, যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি এবং যাদের শারীরিক ওজন অতিরিক্ত। 

অগ্ন্যাশয় 

মুটিয়ে গেলে অগ্ন্যাশয় থেকে যে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়, তা রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না। এতে শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয় এবং কোষে চর্বি জমতে থাকে। এ অবস্থায় অগ্ন্যাশয় থেকে আরো বেশি ইনসুলিন নিঃসৃত হয়ে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু শরীরের আকার বড় হওয়ার কারণে ইনসুলিন কাজ করতে পারে না। এভাবেই মুটিয়ে যাওয়া লোকেরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। আবার ডায়াবেটিস হলে রক্তনালির গাত্র মোটা হতে থাকে। এতে উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। 

হরমোন অসামঞ্জস্য

 মুটিয়ে যাওয়া মেয়ে শিশুদের মাসিক অল্প বয়সেই শুরু হয়। আবার মাসিক শুরু হওয়ার দুই বছর পর মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধিও আর হয় না। তাই মুটিয়ে যাওয়া মেয়ে শিশুরা পরিপূর্ণভাবে বড় হতে পারে না। তাদের শারীরিক গঠন যথাযথ হয় না। পরবর্তীতে এই মেয়েরা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদিতে বেশি আক্রান্ত হয়। 

মস্তিষ্ক 

অতিরিক্ত ওজনের কারণে মস্তিষ্কে সিউডোমটর সেরিব্রি নামের এক ধরনের অসুখ হয়। এতে মস্তিষ্কের কিছু অংশে এক ধরনের তরল জমে উচ্চ চাপের সৃষ্টি করে। এ কারণে মাথায় এক ধরনের ব্যথা হয়। দীর্ঘদিন যদি এই মাথা ব্যথা হয় তাহলে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মুটিয়ে যাওয়া শিশুদের আইকিউ স্বাভাবিক শিশুর চেয়ে কিছুটা কম হয়।

ফুসফুস

 মুটিয়ে গেলে শুধু পেটে নয়, বুকের খাঁচার ভেতরের দিকেও চর্বি জমে। এতে ফুসফুস নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় ফুলে উঠতে যথেষ্ট জায়গা পায় না। তাই বাতাস কম ঢোকে। বাতাস কম ঢোকা মানে শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পরিমাণ কম হওয়া। দেখা গেছে, মুটিয়ে যাওয়া মানুষরা স্লিপ এপনিয়ায় (ঘুমের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া) বেশি আক্রান্ত হয়। এ রোগেও মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। আবার শরীরের অতিরিক্ত ওজন অ্যাজমার ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়ায়। 

হাড় ও শরীরের বৃদ্ধি 

শিশুদের হাড়ের প্রান্তভাগে বিশেষ অংশ থাকে। এটি গ্রোথ প্লেট নামে পরিচিত। এটা এক ধরনের কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি। এগুলোর কারণেই হাড় বড় হয়, মানুষ লম্বা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত শারীরিক ওজন হলে হাড়কে বাড়তি ওজন বহন করতে হয়। এ কারণে তরুণাস্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন আর শিশুর যথাযথ শারীরিক বৃদ্ধি হয় না। আবার অতিরিক্ত ওজনের কারণে হাড় ভাঙার প্রবণতাও বাড়ে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের মেরুদণ্ডের কশেরুকা, কোমরের হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে, যা তীব্র ব্যথাসহ অনেক ধরনের শারীরিক অসুখ তৈরি করতে পারে।

মেটাবলিক সিনড্রোম 

শরীরে সঞ্চিত চর্বি থেকে এক ধরনের রাসায়নিক উৎপন্ন হয়, যা গ্লুকোজ ও চর্বির বিপাক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে। এতে রক্তনালির গাত্রে এক ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি করে। আবার অতিরিক্ত চর্বি জমলে শরীর নিজেও তা বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। যদি শিশু বয়সে কারো ওজন বেশি থাকে এবং পরেও তার ওজন না কমে তাহলে সে অন্যদের তুলনায় হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার অনেক বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। 


 গ্রন্থনা : ডা. মুজাহিদুল ইসলাম 

No comments:

Post a Comment

কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা

তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ আবার খাবারের সময় অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ নিয়ে রুচিসহকারে খেতে থাকেন। তাঁদের জন্য আরও সুখ...