সামনে আসছে ঈদের লম্বা ছুটি। এই সময় খাওয়া-দাওয়াকে ঘিরে প্রত্যেক পরিবারেই বিশাল আয়োজন থাকে। তবে এই পরম আরাধ্য ভোজনপর্বে অনেকেই নানা সমস্যায় ভোগেন- পেটের পীড়া, অন্ত্রপ্রদাহ, বদহজম কিংবা গ্যাসের সমস্যা। খাদ্য তালিকায় রাখুন কিছু ভেষজ গুণ সম্পন্ন মসলা বা খাদ্য উপাদান। দেখুন কেমন ‘লোহা খেয়ে হজম’ করে ফেলতে পারছেন।
দারুচিনি
উষ্ণ দারুচিনি হজমের সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে। এছাড়া ক্ষুদামন্দা, খিটখিটে মেজাজ এবং পেটফাঁপা সমস্যা নিরসনে দারুচিনি হতে পারে একটি অতি উপকারি ভেষজ। দারুচিনিতে রয়েছে প্রোটিন এবং মিনারেল। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা অপরিসীম।
এলাচি
এলাচি পরিপাক নালী সচল করে খাদ্য দ্রæত এবং কম সময়ে হজম হতে সাহায্য করে। এছাড়া যারা গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য এলাচি বেশ কার্যকর হতে পারে। হজমের ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বুক জ্বালাপোড়া, পেটব্যথা, বমি বমি ভাব এবং নিশ্বাসে দুর্গন্ধ দূর করতে এলাচির জুড়ি নেই।
আদা
পেট খারাপজনিত সমস্যা সমাধানে একটি পরীক্ষিত উপাদান হল আদা। পেট ব্যথার সহজ সমাধান হতে পারে আদা চা বা আদার রস। এছাড়া এটি শরীর শীতল করে এবং কাশি নিরাময়ে সাহায্য করে। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
হলুদ
খাদ্য পরিপাক ক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে হলুদ। এতে বিদ্যমান সারকিউমিন নামক উপাদান পরিপাকপ্রদাহ থেকে দেহকে রক্ষা করে। এছাড়া সারকিউমিন মানসিক অবসাদ দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অন্ত্রের রোগ, ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং ত্বক ও লিভারের সুরক্ষায় হলুদ বেশ কার্যকর হতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে।
যবজাতীয় শস্য
যব বা জইএ বিদ্যমান আঁশ শরীরে চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে এবং ঘুমের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
জিরা
গ্যাসের সমস্যায় যারা নাজেহাল তাদের জন্য জিরার বিকল্প খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এছাড়া স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও জিরা বেশ কার্যকর। জিরায় বিদ্যমান এনজাইম হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। নিদ্রাহীনতা দূর করতে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
গোলমরিচ
গাত্রপ্রদাহ দূর করার জন্য প্রতিদিন খাবারে উপকরণ হিসেবে গোলমরিচ ব্যবহার করা উচিত। গোলমরিচ খেলে পাকস্থলি থেকে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের নিঃসরণ দ্রæত ঘটে যার ফলে খাবার সহজে হজম হয়। এছাড়া এটি দেহ থেকে ঘাম ঝরিয়ে জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
যষ্টিমধু
যষ্টিমধুর গুণ বলে শেষ করা যাবে না। অন্ত্রপ্রদাহের হাত থেকে মুক্তি পেতে যষ্টিমধুর জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া আলসার, ব্রংকাইটিস প্রতিরোধে এবং লিভারের সুরক্ষায় যষ্টিমধু বিশেষ উপকারী বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কফ এবং কাশি নিরামক হিসেবেও যষ্টিমধুর বেশ সুখ্যাতি রয়েছে।
লালমরিচ
লালমরিচ দেহে যন্ত্রণার উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী নিউরোট্রান্সমিটার ‘সাবট্যান্স পি’-কে নিঃশেষিত করে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক প্রদাহ থেকে মুক্ত থাকা যায়। অতিরিক্ত ঝালযুক্ত লাল মরিচ স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে বলে গবেষণায় জানা গিয়েছে।
মেনথল
পেটের পীড়া থেকে মুক্ত পেতে মেনথলের বিকল্প নেই। মেনথল তেলের ক্যাপসুল বদহজম দূর করতে সক্ষম। এছাড়া যারা সাইনোসাইটিসের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য মেনথল গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
কেওড়া
কেওড়া একটি উপকারী ঔষধি যা পরিপাকনালী সুরক্ষিত রাখে। যারা পেটফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী।
আপনার প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকায় উপরে বর্ণিত খাদ্য উপকরণগুলোর উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। সব ধরনের রোগ-শোক থেকে দূরে থেকে উৎসবে আনন্দ এবং পেট-পুজো দুটোই করা যাবে।
Ñনাসিফ রাফসান
No comments:
Post a Comment