প্যাটেলা- ফিমোরাল সন্ধি যে সকল সন্ধির স্থান চ্যুতি বারংবার ঘটে তাদের মধ্যে অন্যতম। স্থানীয় ভাষায় হাঁটু সন্ধির 'মালই' বলে যে হাড়টিকে আমরা চিনি চিকিৎসা বিদ্যায় তার নাম 'প্যাটেলা'। স্কন্ধ সন্ধি এবং গোড়ালী সন্ধির পরই এই সন্ধির স্থানচুতির ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। প্যাটেলা ফিমোরাল সন্ধির বারংবার স্থান চ্যুতির অন্যতম ঘটনা আঘাত ব্যতিত জন্মগত ত্রুটির কারণে ঘটে থাকে।
কারণ ঃ প্যাটেলা সাধারণত: বাইরের দিকেই স্থানচ্যুতি হয়ে থাকে এবং ফিমার অস্থির বাইরের কন্ডাইলের দিকে প্যাটেলা সস্নিপ করে সরে যায়। বারংবার প্যাটেলা স্থানচ্যুতির কারণগুলোর মধ্যে নিম্নের চারটি অন্যতম।
যথা ঃ
(১) লিগামেন্ট ল্যাক্সিটি বা লিগামেন্টের জন্মগত ত্রুটির কারণে ঢিলে ঢালা গঠন।
(২) ফিমারের বাইরের কন্ডাইল অপর্যাপ্ত বর্ধনজনিত কারণ এবং ফিমারের আন্তঃ কন্ডাইলের গ্রুভ অগভীর থাকা।
(৩) প্যাটেলার উপরের দিকে স্থান লাভ এবং আন্তঃ কন্ডাইলার গ্রুভে স্বাভাবিক স্থানে না থাকা এবং প্যাটেলার খর্বাকৃতি।
(৪) জেনুভাল গ্রাম ডিফোরমিটি : যার ফলে কোয়াড্রিসেপস টেনডন প্যাটেলাকে টেনে বাইরের দিকে নিয়ে যায়।
লক্ষণ/উপসর্গ :
প্যাটেলার রিকারেন্ট ডিজলোকেশন -ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশী হয়। প্রায়শ: দুই হাঁটু আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণতঃ বয়:সন্ধিকালে বেশী হয়ে থাকে। হাঁটুভাঁজ করে কোন কাজ করতে গেলেই এটা ঘটে থাকে, আঘাত তত জরুরী নয়। হাঁটু পুরো ভাঁজ ব আধা ভাজ বা ফ্লেক্সড অবস্থায় হঠাৎ রোগী হাঁটুর সামনের অংশে তীব্র ব্যথা অনুভব করে এবং হাঁটু ভাজ বা ফ্লেক্স করা অসাধ্য হয়ে পড়ে। অনেক সময় প্যাটেলার স্থানচ্যুতি সহজেই নিশ্চিত হওয়া যায় এবং রোগী নিজে কিংবা আশে পাশের অন্য কেউ ঐ স্থানেই স্থানচ্যুত প্যাটেরা যথাস্থানে হাত দিয়ে বসিয়ে দেয়। হাঁটু ভালভাবে পরীক্ষা করলে আক্রান্ত হাঁটু ফুলে যাওয়া এবং প্যাটেলা বাইরের কন্ডাইলের উপরে দিকে সরে যাওয়া নিশ্চিত হওয়া যায়। আর যদি স্থানচ্যুত প্যাটেলা যথাস্থানে বসানো হয় তবে হাঁটুর ভিতর রক্তরঙের রস পাওয়া যায় এবং কোয়াডিসেপস এক্সপানশনের ভিতরের দিকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় কারণ প্যাটেলা সরে যাওয়ায় এটার কিছু ফাইবারে তীব্র টান পড়ে অথবা ছিঁড়ে যায়। জন্মগত জেনারেল লিগামেন্ট ল্যাক্সিটি থাকলে তা সহজেই বোঝা যায়। রোগীর হাঁটু সোজা করতে গেলে দেখা যায় হাঁটু উপরের দিকে বেশী বেঁকে যায় বা জেনু ভরিকারভাটাম হয়। একই ঘটনা ঘটে কব্জি সন্ধি এবং আঙ্গুলের সন্ধির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বুড়ো আঙ্গুলের সন্ধির ক্ষেত্রে। এ ধরনের মিল সন্ধির ক্ষেত্রে বাবা মা অথবা অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। প্যাটেলা এ ক্ষেত্রে উপরের দিকে অবস্থিত থাকে এবং আকারে ছোট হয়।
পরীক্ষা নিরীক্ষা ঃ
স্থানচ্যুত অবস্থায় এক্সরে করলে প্যাটেলার সরে যাওয়া নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে স্থানচ্যুত প্যাটেলা পুন:স্থাপন করলে এক্সরেতে স্বাভাবিক দেখা যায়। তবে এক্সরেতে প্যাটেলার আকৃতি ছোট এবং সাধারণ লেভেল থেকে উপরের দিকে অবস্থান বোঝায় যায়, যা সাধারণত উভয় হাঁটুতেই ঘটে যেমন - ''প্যাটেলা অ্যাল্টা''।
রোগের গতি প্রকৃতি :
প্যাটেলার স্থানচ্যুতি বারংবার ঘটবেই এমন ধারণা ঠিক নয়, অনেক ক্ষেত্রে একবার ঘটেই স্থানচ্যুতি বন্ধ হয়ে যায়। তবে বার বার ঘটলে ঘন ঘন ঘটে। রোগীর মানসিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এবং হাঁটুর অষ্টিও আর্থ্রাইটিস রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চিকিৎসা ঃ চিকিৎসা শুরুর আগে রোগীকে ভালভাবে তার রোগ সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। ফিজিও থেরাপী ও ব্যায়াম দিয়ে রোগীর কোয়াড্রিসেপস মাংসপেশী শক্তিশালী করতে হবে। বারংবার ডিজলোকেশনের কারণে যদি হাঁটু অকেজো হয়ে যেতে থাকে তাহলে অপারেশন করাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
No comments:
Post a Comment