Saturday, October 31, 2015

শৈশব মানেই একটা মিষ্টি সময়





শৈশব মানেই একটা মিষ্টি সময়। একটা ভাল লাগার সময়। একটা সুন্দর সময়। আর কৈশর মানেই দুরন্তপনা। এলমেলো, অগোছালো, বিরামহিন, বাঁধাহীন সময়। কৈশরের দুরন্তপনায় ছুটে চলতাম এদিক থেকে সেদিক। মন যেখানে যেতে চাইত সেদিকেই ছুটে যেতাম। কি বৃষ্টি, কি ঝর, কি তুফান, কি বাধা কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করতাম না। তবে মাকে দেখে বিষম ভয় পেতাম। কারণটা হল বৃষ্টির উপর মার নিষেধাজ্ঞা ছিল। মা বলত, বাইরে বেরুনো যাবে না। বৃষ্টি ধরলে জ্বর আসবে। এদিকে আমাদের বাড়ী ছিল টিনের চাল দেয়া। ঘরের টিনের চালের উপর ঝুমঝুম শব্দ করে বৃষ্টি পড়ছে। মনে হয় কোন গানের শব্দ কানে আসছে। কিছুতেই মনকে ধরে রাখতে পারতাম না। কি করব কিছুতেই বুঝতে পারতাম না। এদিকে বাইরে বন্ধুরা অপেক্ষা করছে। চোখের সামনে বন্ধুদের হাত ইশারার দৃশ্য বারবার ভেসে আসছে। মনের মধ্য অন্য রকম অস্থিরতা, অন্যরকম ব্যকুলতা, অন্য রকম আকুলতা হয়ে ধেয়ে বেড়াত। একটি প্রশ্ন বারবার মনের মধ্য ঘুরপাক খেত, একটি প্রশ্ন বারবার আমাকে প্রশ্নবিদ্ব করত কখন বাইরে বেরুতে পারব ? আমি কখন বৃষ্টির পানিতে নিজেকে ভিজিয়ে ফেলতে পারব। কখন বৃষ্টির ছোঁয়া নিতে পারব। মার ঘুমের অপেক্ষায় থাকতাম। যেই দেখতাম মা ঘুম ঘুম চোখ। সঙে সঙেই টিপটিপ করে পা ফেলতাম। কোন শব্দ যেন না হয় ঠিক সেইভাবে দরজা পর্যন্ত পৌছাইতাম। দরজা পার হয়েই একটা দৌড়। একদম চোখ মুখ বন্ধ করে ভোঁ দৌড়ে চলে যেতাম বন্ধুদের কাছে। বৃষ্টির দিনে ফুটবল খেলতে অনেক ভাল লাগত। সবাই মিলে ছুটে যেতাম পতিত কোন মাঠে। যেখানে ধান কাটা বা অন্য ফসলি চাষাবাদ করা শেষ হয়ে গেছে। ব্যস্ত হয়ে উঠতাম ফুটবল খেলতে। কতদিন ফুটবল খেলে পা'য়ে ব্যাথা পেয়েছি। কতদিন ফুটবল খেলে কাদা মাখা শরীর নিয়ে বাড়ী ফিরছি তার কোন হিসেব নেই। তবে ভয় করত মার সামনে আসতে। একবারতো পাঁ ভেঙে গেছে। কোনভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে বাড়ি আসলাম। ভয়ে ভয়ে মার সামনে আসলাম। আর ভাবছি আজ কোন রক্ষা নেই। আজ নিশ্চিত কোন মাইর কপালে আছে। অথচ মার সামনে আসতেই মা অস্থির হয়ে যেত্ কিসের বকা সব মা ভুলে যেত। মা আমায় নিয়ে অস্থির হয়ে জরিয়ে ধরত। হাজারটা প্রশ্ন জুড়ে দিত, কোথায় ব্যথা পেয়েছিস, পায়ের হাড়ের কিছু হয়নিতো, দেখে শুনে খেলতে পারিস না বলে আমায় বুকে জরিয়ে ধরত। সন্ধ্যা বেলা মা তেল গরম করে পায়ে ছ্যাকা দিতে থাকত। মার এই ভালবাসায় আমি কেঁদে ফেলতাম। আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারতাম না। মাকে আমি জড়িয়ে ধরে বলতাম মা আমি আর কখনো ফুটবল খেলতে যাব না। ফুটবল খেলা পঁচা। তারপর পা একটু ভাল হয়ে গেলেই আবার খেলতে যেতাম। ভুলে যেতাম পুরাতন ওয়াদা। 
এভাবেই চলত দুষ্টামি ভর সময়।
আর স্কুল মানেতো একটা অন্যরকম ভাল লাগার স্থান। স্কুলে না গেলে ভালই লাগত না। রাত আসলে শুধু অপেক্ষায় থাকতাম কখন দিন হবে। কখন স্কুলে যেতে পারব। কখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারব, কখন এই কবিতাটি স্যারের কাছে শুনিয়ে দিতে পারব, কখন স্কুল বন্ধুদের টাকায় আইসক্রীম খেতে পারব। তবে আইসক্রীম না খেলেতো থাকতেই পারতাম না। আইসক্রীম আবার দু রকম ছিল। একটা নারকেলের তৈরী যাকে বলা হত নারকেলের আইসক্রীম আর একটা পানসে আইসক্রীম। আমাদের এক বান্ধবী ছিল আবার অন্যরকম। নাম ছিল আসমা। সে আইসক্রীম খাবার সবচেয়ে বেশী পটু ছিল। আমাদের বলত আমি বিয়ে করলে আইসক্রীম ওয়ালাকে বিয়ে করব। আমরা বলতাম কেনরে। বলত বাবা মা আইসক্রীম খাবার যে টাকা দেয় তা দিয়ে ভাল মতো মনের মত করে প্রতিদিন আইসক্রীম খেতে পারি না। তার কথা শুনে আমরা খিল খিল করে হেসে ফেলতাম। আমরা স্কুলের বন্ধুরা তাকে আইসক্রীম ওলার বউ বলে ডাকতাম। মাঝে মধ?্য সে রেগে যেত স্যারদের কাছে বলে দিবে বলে ভয় দেখাত। একবারতো স্যারের কাছে আমাদের অনেকের নামে নালিশ করে বসল। ক্লাস রুমে তার নালিশের কথা শুনে স্যারসহ সবাই হেসে ফেলেছিল। সেদিন ক্লাসের ভিতর যেন খই ফোটার মত শব্দ হচ্ছিল। পরেতো আমরা আবার স্কুল ছুটে হলে তাকে আইসক্রম ওয়ালার বউ বলে রাগাতাম। এভাবে চলত স্কুল সময় গুলো। তবে আমাদের ভিতর একটা বেশি প্রতিযোগীতা ছিল স্কুল ফাস্ট হওয়া। এজন্য আমরা সবাই গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়া লেখা করতাম। আর স্কুলের ক্লাস করতাম নিয়মিত। এক সাথে প্রাইভেটে যেতাম। প্রতিযোগিতা করতাম কে আগে বসবে। আগের বেঞ্চে বসলে ভাল শোনা যেত। বন্ধুরা তোমরা নিশ্চয় অনেক ভাল। তোমাদের শৈশব কৈশর অনেক ভাল কাটছে। আরো ভাল কাটুক এই শুভ কামনা রইল।

No comments:

Post a Comment

কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা

তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ আবার খাবারের সময় অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ নিয়ে রুচিসহকারে খেতে থাকেন। তাঁদের জন্য আরও সুখ...