Sunday, November 1, 2015

কম্পার্টমেন্ট সিন্ড্রোম কি?


হাতের পায়ের অস্থি ভেঙ্গে যাওয়ায় বড় কোন রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও রক্ত সরবরাহ বিঘি্নত জনিত কারণে ব্যাপক পচনের ফলে মাংসপেশী, রক্তের নালী এবং নার্ভের ধ্বংসযজ্ঞ সংগঠিত হয়। একে চিকিৎসা বিদ্যায় কম্পার্টমেন্ট সিন্ড্রোম বলে। 
কেন হয় : কোন কারণে হাতের বা পায়ের মাংসপেশীর রক্তক্ষরণের ফলে ফুলে গিয়ে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। যার ফলে অষ্টিওফেসিয়াল কম্পার্টমেন্টে প্রেসার বৃদ্ধি পায়। চাপ বৃদ্ধির ফলে ক্যাপিলারীতে রক্ত প্রবাহের মাত্রা কমে যায় ; আর মাংসপেশীতে রক্তের সরবরাহ আরো কমে যায়, আরো ফুলে যায় বা ইডিমা হয়- প্রেসার বা চাপ আরো বাড়তে থাকে, ফলে তীব্র রক্ত সরবরাহের হ্রাস ঘটে। এটা ভিসিয়াস সাইকেল বা চক্রাকারে ঘটতে থাকে। প্রায় ১২ ঘন্টা পর অস্টিওফেসিয়াল কম্পার্টমেন্টে মাংসপেশী এবং নার্ভের নেক্রোসিস ঘটে বা পঁচে যায়। নার্ভ অনেক সময় তার কর্মক্ষমতা ফিরে পায় কিন্তু পঁচে যাওয়া পেশী আর ভাল হয় না পরবর্তীতে তা ননইলাস্টিক ফাইব্রাস কলা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় এবং বৈকলত্যতা সৃষ্টি করে। 
কি কি কারণে ঘটে ঃ বাহুর বা পায়ের অস্থি ভেঙ্গে গেলে সাধারণত: কবিরাজের অপচিকিৎসা গ্রহণের একটা প্রবণতা সামাদের মাঝে দেখা যায়। যদি কোন কারণে গাছান্ত ঔষধের টাইট ঝাপ বা প্রলেপ বাহুতে বা উঁচুতে বেঁধে দিলে, প্লাস্টার করার সময় আনাড়ী চিকিৎসক টাইটভাবে প্লাস্টার বাঁধলে অথবা যে কোন সময় সর্পদংশনজনিত কারণে হাত-পা বেশীক্ষণ দড়ি দিয়ে টাইট করে বেঁধে রাখলে কিংবা ভুলবশত: বেশীক্ষণ সময় টুর্নিকুয়েট বেঁধে রাখলে কম্পার্টেমেন্টের চাপ বেড়ে গিয়ে হাত অথবা পায়ে নেক্রোসিস বা পচন ধরে। 
লক্ষণ বা উপসর্গ ঃ কম্পার্টমেন্ট সিন্ড্রোম একটি মারাত্মক এবং জরুরী সমস্যা। কতকগুলো হাইরিস্ক ইনজুরি যেমন - কনুইয়ের হাড়, সম্মুখবাহুর হাড় কিংবা টিবিয়ার উপরে তৃতীয়াংশে, হাত ও পায়ের একাধিক অস্থি ভেঙ্গে গেলে, ক্র্যাশ ইনজুরি বা থেতলানো ক্ষত কিংবা হাত-পায়ের গোলাকৃতির পুড়ে গেলে, ইনফেকশন অথবা ইন্টারলাল ফিক্সেশন অপারেশন হলে ইত্যাদি ঘটনায় কম্পার্টমেন্টের চাপ বেড়ে যায় এবং 'কম্পার্টমেন্ট সিন্ড্রোম' হয়। উপসর্গ ইংরেজিতে পাঁচটি পি (চ) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। (১) চ পেন বা ব্যথা, চ১ প্যারোস্থেসিয়া চিন চিন বা ঝিনঝিন করা, চ৩ প্যালোর বা কালচে হয়ে যাওয়া, চ৪ প্যারালাইসিস বা অনুভূতিহীন হয়ে যাওয়া বা অবশ হয়ে যাওয়া, চ৫ পালস্ লেসনেস বা নাড়ীর গতি অনুভব না করা (আক্রান্ত স্থানের নীচের দিকে) তবে সবগুলো উপসর্গ এক সাথে নাও থাকতে পারে। তবে প্রাথমিক লক্ষণ তীব্র ব্যথা, হাত বা পা ছিড়ে যাচ্ছে এমন অনুভূতি। তারপরেই অনুভূতি কমে যাওয়া। চামড়ার অনুভূতি পরিবর্তন দ্রুত ঘটে। হাত বা পায়ের আক্রান্ত স্থান ফুলে তীব্র ব্যথা হয় এবং চামড়া টান টান হয়ে উঠে। আক্রান্ত মাংসপেশীস্ট্রেস করলে তীব্র ব্যথা অনুভব করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে নার্ভ প্যারালাইসিস হলে প্যাসিভ স্ট্রেস টেস্ট এ কোন রিএকশন রুগী দেখায় না। 
রোগ নির্ণয় ঃ রোগের ইতিহাস, উপসর্গ এবং কম্পার্টমেন্টের প্রেসার পরিমাপ ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগ সহজেই নির্ণয় করা যায়। হাইরিক্স ইনজুরির (হাতের বা পায়ের অস্থি ভেঙ্গে গেলে) ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক প্রেসার বা কম্পার্টমেন্ট এর চাপ মনিটর করতে হয়। কমপার্টমেন্টের প্রেসার থেকে ডায়াস্টলিক প্রেসারের বিয়োগ ফল যদি ৩০মি. মি পারদ স্তম্ভের কম হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 
চিকিৎসা ঃ এ রোগের চিকিৎসা 'অত্যন্ত জরুরী' বিষয় হিসাবে চিহ্নিত করা যায়, কাল বিলম্বে হাত বা পা গ্যাংগ্রিন হলে কেটে ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। 
কম্পার্টমেন্ট সিন্ড্রোম আসন্ন মনে হলে, সাথে সাথে ব্যান্ডেজ প্লাস্টার ড্রেসিং বা বাধন খুলে দিতে হবে। হাত বা বিছানার সাথে ফ্লাট ভাবে রাখতে হবে, উঁচু করে রাখলে আরো রক্ত সরবরাহ বন্ধের কারণে অসুস্থতার মাত্রা আরো বাড়বে। কম্পার্টমেন্টের প্রেসারের মনিটর করার সময় রুগীর ডায়াস্টলিক প্রেসার ও কম্পার্টমেন্টের প্রেসারের ব্যবধান ৩০ মি মি পারদ স্তম্ভের কম হলে অপারেশন একমাত্র চিকিৎসা। এখানে ফাসিওটমি অপারেশন করা হয়। পায়ের ক্ষেত্রে চারটা কম্পার্টমেন্টেই কেটে চাপমুক্ত করা হয়। হাতের ক্ষেত্রেও প্রতিটি কম্পার্টমেন্টের চাপমুক্ত করে দেওয়া হয়। কাটা অংশ মুক্তভাবে রাখা হয়। মাংসপেশীর পচা অংশ কেটে ফেলা হয় এবং পরবর্তীতে ঘা শুকানোর পর স্কিনগ্রাফটের প্রয়োজন পড়ে। 
জটিলতা ঃ কম্পার্টমেন্ট সিন্ড্রোমের রুগীর সবচেয়ে বড় জটিলতা হাত বা পা গ্যাংগ্রিন হলে কেটে ফেলে দিয়ে রুগীর জীবন বাঁচাতে হয়। দীর্ঘ মেয়াদী জটিলতা বৈকল্য যা ভিআইসি বা ভকম্যান ইস্কিমিক কণ্ট্রাকচার' কম্পার্টমেন্ট সিন্ড্রোম- একটি অতীব জরুরী সমস্যা। তাই শুরুতেই একজন অভিজ্ঞ অর্থোপেডিক সার্জনের পরামর্শই শুধু পারে হাত বা পা পচন কিংবা কেটে ফেলা থেকে রুগীকে বিরত রাখতে। তাই সবাইকে সতর্কতার সাথে এ রোগের চিকিৎসার আহবান জানিয়ে শেষ করছি।

No comments:

Post a Comment

কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা

তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ আবার খাবারের সময় অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ নিয়ে রুচিসহকারে খেতে থাকেন। তাঁদের জন্য আরও সুখ...