Sunday, November 1, 2015

স্তন ক্যান্সার সচেতনতার


স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর অক্টোবর মাসকে বিশ্বব্যাপি স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসাবে পালন করা হয়। "গোলাপী রিবন" স্তন ক্যান্সার সচেতনতার প্রতিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার হয়। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য নারীদের সচেতনতা করাই স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস পালনের উদ্দেশ্য।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের নারীদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার বাড়ছে। গত দুই দশক আগেও মহিলাদের জরায়ুর মুখ ক্যান্সার শীর্ষে ছিল, শুধুমাত্র সচেতনতা আর প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের কারণে এ হার ক্রমশ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে নারীদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার প্রবনতা আশংকাজনকহারে বেড়ে বর্তমানে শীর্ষে। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন তবে তা নারীদের তুলনায় শতকরা ১ ভাগেরও কম। স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি সমুহ এড়ে চলা আর প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ও এ জনিত মৃত্যুহার কমানো সম্ভব।
স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি সমুহ ঃ
কিছু ঝুঁকি অপরিবর্তনযোগ্য, তবে সেক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করে সুস্থ থাকা যায়। 
# পরিবর্তনযোগ্য কারণ/ঝুকি সমূহ ঃ
অধিকতর মেদবহুল, অতিরিক্ত শারীরিক ওজন।
শারীরিক পরিশ্রম না করা।
অবিবাহিত বা সন্তানহীনা থাকা। 
বিবাহিতদের ক্ষেত্রে ৩০ বছরের আগে সন্তান জন্ম না দেওয়া।
শিশুকে বুকের দুধ পান না করানো। 
দীর্ঘদিন একটানা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি/ইনজেকশন ব্যবহার করা।
স্তন বা বুকে বিকীরণ চিকিৎসা নিলে।
# অপরিবর্তনযোগ্য কারণ/ঝুঁকি সমূহ ঃ
প্রত্যেক নারীই স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকেন। তবে বয়স বাড়লে ঝুঁকিও বাড়ে।
পরিবারে (মা, খালা, নানী, বোন, কন্যা) কেউ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে।
জিনগত ত্রুটি (বিআরসিএ-১ ও ২)।
অল্প বয়সে (১২ বছরের পূর্বে) ঋতু স্রাব শুরু ও দেরীতে রজঃনিবৃত্তি (৫৫ বছরের পর) হওয়া। 
স্তন গ্রন্থির পরিমাণ অধিক হলে।
স্তনে অতীতে কোন রোগ (চৎড়ষরভবৎধঃরাব ভড়ৎসং ড়ভ ঋরনৎড়পুংঃরপ ফরংবধংব), যা পরে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে।
অতীতে অন্য স্তনে ক্যান্সার অথবা জরায়ু ক্যান্সার হয়ে থাকলে।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করার উপায় ঃ 
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন। নিজের উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী পরিমিত ওজন বজায় রাখুন।
শারীরিক পরিশ্রম করুন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০মিনিট করে সপ্তাহে কমপক্ষে ৫দিন হাটুন।
মাছ, শাকসব্জি, ফলমুল, বিচিজাতীয় খাবার বেশী খান।
মাংস, মদ, সিগারেট এড়িয়ে চলুন।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি/ইনজেকশন ব্যবহারের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৩০ বছরের পূর্বে ১ম সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করুন।
সন্তানকে পূর্ণ ২ বছর বুকের দুধ পান করান।
নিকট আত্মীয়ের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে আপনার করণীয় সম্পর্কে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 
প্রয়োজনে ক্যান্সার প্রতিরোধী ঔষধ ও সার্জারী করা।
প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের উপায় ঃ 
প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের একমাত্র উপায় হলো নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা। যাতে করে স্তনে কোন সমস্যা বা পরিবর্তন থাকলে তা নিজেই সনাক্ত করা যায়।
ক) কখন করবেন ঃ প্রতি মাসেই ঋতু স্রাব শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই। তবে যাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে তারা মাসের যে কোন দিন করতে পারেন।
খ) কিভাবে করবেন ঃ শুয়ে ও দাড়িয়ে দুই অবস্থায় আয়নার সামনে পর্যাপ্ত আলোয় কণ্ঠহার থেকে কোমর ও দুই বগল পর্যন্ত কাপড় সরাতে হবে। দুই বাহু দেহের দুই পাশ্র্বে ঝুলিয়ে, কোমর চেপে ধরে এবং হাত মাথার উপরে উচিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। শুয়ে কাধের নিচে ছোট বালিশ বা তোয়ালে দিতে হবে। ডান হাত দিয়ে বাম স্তন ও বাম হাত দিয়ে ডান স্তন পরীক্ষা করতে হবে। গোসলের সময়ে হাতে সাবান মেখে পরীক্ষা করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
গ) কি করবেন ঃ হাতের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ হচ্ছে আঙ্গুলের প্যাড। তাই পরীক্ষার সময় হাতের মাঝের তিন আঙ্গুল ব্যবহার করা ভাল। স্তনে আঙ্গুল দিয়ে হালকা, ভারী ও বেশ জোড়ে চাপ দিয়ে প্রত্যেকটি অংশে কয়েকবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে (ঘুরন্ত লাটিমের মতো) অনুভব করতে হবে। একই নিয়মে দুই বগলও পরীক্ষা করতে হবে। 
ঘ) কি লক্ষ্য করবেনঃ 
স্তনের আকার-আকৃতি।
স্তন ত্বকের কোন পরিবর্তন (পুরুত্ব, শক্ত হওয়া, কুচঁকে যাওয়া), টোল পড়া, ত্বকে রঙের পরিবর্তন।
স্তনে বা বগলে চাকার অনুভুতি।
স্তন বৃন্ত ডেবে যাওয়া, ব্যথা হওয়া।
স্তন বৃন্তের চার পাশ্র্বে ফুসকুড়ি হওয়া, চাপ দিলে তরল পদার্থ বের হওয়া।
এ ধরনের যেকোন অস্বাভাবিকতা পাওয়া গেলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 
প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের উপকারিতাঃ
প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় হলে সাধারণ অপারেশান এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ হয়, খরচ অল্প হয়। স্তন সম্পূর্ণ কেটে ফেলতে হয় না।
মনে রাখতে হবে স্তন ক্যান্সারের সময়মত চিকিৎসা ও আক্রান্তকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পরিবার প্রধানের। মহিলাদের জড়তা আর অবহেলাতেই প্রাণঘাতী হতে পারে স্তন ক্যান্সার। বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই চিকিৎসকের কাছে আসেন রোগের জটিল পর্যায়ে যখন আরোগ্য লাভের কোন সুযোগ থাকে না। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করুন প্রতিমাসে নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করতে শিখুন।

No comments:

Post a Comment

কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা

তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ আবার খাবারের সময় অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ নিয়ে রুচিসহকারে খেতে থাকেন। তাঁদের জন্য আরও সুখ...