ওই স্লোগানে ভীষণ তিতিবিরক্ত মাশরাফি বিন মর্তুজা। এক ম্যাচ জিতলেই 'বাংলাওয়াশ... বাংলাওয়াশ' রব অলক্ষ্যে দলের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেয় বলে। কিন্তু সিরিজের দুই ম্যাচ যখন জেতা হয়ে গেছে, আরেকটি ধবলধোলাইয়ের প্রত্যাশা কেন করবে না সমর্থকরা! আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে বাংলাদেশ তাই খেলতে নামছে আরেক বাংলাওয়াশ-এর সম্ভাবনার রং মেখেই।
এক ম্যাচ জিতলে রঙের হোলিখেলায় উৎসব করার দিন পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ অনেক আগে। জয়টা এখন আর ব্যতিক্রম নয় যে নিয়মে পরিণত প্রায়। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে এই বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে হারায় তিন ম্যাচেই। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও বাংলাওয়াশ করতে না পারার আক্ষেপে পোড়ে। পিছিয়ে পড়েও পদানত করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। অদম্য গতিতে ছুটে চলা এই বাংলাদেশকে রুখবে কে? জিম্বাবুয়ে? আগাম ক্রিকেটীয় সমীকরণে অন্তত এর কোনো সমর্থন মেলে না। আজ তাই আরেকটি বাংলাওয়াশ কেবলই যেন আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষায়।
তবে সমর্থকদের সরল ভাবনা কিংবা বিশ্লেষকদের জটিল বিশ্লেষণের পথ ধরে হাঁটছে না মাশরাফির দল। অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটের আপ্তবাক্য জানা সবার। জিম্বাবুয়ের কাছে হারলে না হয় সেটি অঘটনের মর্যাদা পাবে; কিন্তু তাতে তো আর বাংলাদেশ ক্রিকেটের মর্যাদাহানি ঠেকানো যাবে না। সর্তক তাই স্বাগতিকরা। বিন্দুমাত্র আয়েশি না হয়ে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ক্রিকেট-জমিনে আরেক দফা পেশাদার পারফরমেন্সের স্বাক্ষর রাখতে মুখিয়ে তারা আজ। তাহলেই তো ম্যাচ জয়। তাহলেই তো আরেকটি বাংলাওয়াশের কীর্তিধন্য মাশরাফির দল।
এই মাশরাফির অধিনায়ক হিসেবে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট-রথের অমন অপরাজেয় গতিতে ছুটে চলা। ওয়ানডে ক্রিকেটে সাফল্যের সোনায় মোড়ানো বছরের শেষটা আজ আরেক জয়ে হওয়ার প্রত্যাশায় বাড়াবাড়ি নেই কোনো।
ম্যাচ, অনুশীলন, আবার ম্যাচ, আবার অনুশীলন- বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজের দিন ধরে রুটিন এমনই। মাঝের দিনগুলোতে তাই অনুশীলন আর বাধ্যতামূলক না। জিম্বাবুয়ে তো কাল আসেইনি স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশের আটজন আসেন ঐচ্ছিক অনুশীলনে। খুব যে তেড়েফুঁড়ে অনুশীলন করেছেন তাঁরা, এমন নয়। তবে আজ আরেক জয়ের জন্য বাংলাদেশ উন্মুখ থাকবে নিঃসন্দেহে।
তবে সেই মুখিয়ে থাকার প্রমাণ কিন্তু নেই মুস্তাফিজুর রহমানের কথায়। এ ম্যাচ জিতলেই তো আরেকটি হোয়াইটওয়াশ- সেটি সম্ভব কি না এমন প্রশ্নে কাল দলের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তাঁর উত্তর, 'সব উপর আল্লাহর ইচ্ছা। আমাদের চেষ্টা আছে, দেখি। আশা আছে।' ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ওয়ানডে অভিষেকের পর থেকে জয়ের ধারায় থাকা নিয়েও তাঁর ছোট্ট কথা, 'ভালো লাগারই কথা। তিনটা সিরিজে ছিলাম। আমি খুশি, সতীর্থরাও খুশি।' বাংলাদেশের সাফল্যে পেসার-স্পিনাররা যে যূথবদ্ধ অবদান রাখছেন, এ বিষয়ক প্রশ্নেও অভিন্ন উত্তর মুস্তাফিজের, 'সবগুলা এক প্রশ্ন। একই উত্তর। ভালো লাগারই কথা।'
যতটা গুছিয়ে বোলিং করেন, ততটা গুছিয়ে হয়তো বলতে পারেননি মুস্তাফিজ। তবে তাঁর মতো ওই ভালো লাগার রেশ ছড়িয়ে আছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে। মানচিত্রজুড়ে ক্রিকেট-উল্লাসের চিল-চিৎকার। ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রাণ এখন অপেক্ষায় সেই অপূর্ব মুহূর্তের। আরেকটি জয়ের। আরেকটি বাংলাওয়াশ-এর।
নাহ্্, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ বিজয় যেমন অক্ষয় কীর্তির কালিতে লেখা হয়ে আছে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তা হবে না। কিন্তু আজকের এক ম্যাচ হারলেই সেটি হয়ে যাবে যে চাঁদের কলঙ্ক! এমন চাঁদনি-ভাসানো বছরের শেষে সেটি কী আর হতে দেবেন মাশরাফি বিন মর্তুজার দল!
স্বপ্নের মতো
* এ বছর ১৭ ওয়ানডের ১২টি জিতেছে বাংলাদেশ, হার ৫টিতে। সাফল্যের হার ৭০.৫৮ শতাংশ, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার এ বছর জয়ের হার সর্বোচ্চ ৮৩.৩৩ শতাংশ।
* ওয়ানডেতে বাংলাদেশ বিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করেছে ১০ বার।
* জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ১৪৫ রানের জয় এ বছর বাংলাদেশের সেরা। রানের ব্যবধানে জয়ের হিসাবে এটা ২০১৫ সালেরই ১২তম সেরা।
* ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে ৪৩ রানে ৬ উইকেট পেয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান, যা এক ইনিংসে এ বছরের সপ্তম সেরা।
No comments:
Post a Comment