Monday, November 16, 2015

ডায়াবেটিসের কারণ ও প্রতিকার

বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস একটি বিপাকজনিত রোগ। মানব দেহের ইনসুলিন নামের হরমোনের সম্পূর্ণ বা অপেক্ষিক ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় তা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এইভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়ে থাকে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ডায়াবেটিসের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষের মাঝেও ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তবে তা এতটা আতঙ্কজনক হারে নয়।
বিশ্বের মোট ডায়াবেটিস রোগীর ৩৫ শতাংশই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার। বাংলাদেশও এর মধ্যে রয়েছে। এসব মানুষের একটি বড় অংশ বাস করে শহরাঞ্চলে বা উপশহরাঞ্চলে। তবে একটু সচেতন হলেই রুখে দেয়া যেতে পারে ডায়াবেটিসকে। আছে নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পথ। ডায়াবেটিস ও তার প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ: দিন দিন খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হচ্ছে। হঠাৎ হজমশক্তি বেড়ে গেল নাকি? কিন্তু এত খাবার যাচ্ছে কোথায়। হাতি লোফা মোবারকের মতো নয়। চেহারা হচ্ছে তালপাতার সেপাইয়ের মতো। ডায়াবেটিসের অন্যতম লক্ষণ অনেকটা এ রকমই। তা ছাড়া আছে বারবার প্রস্রাব হওয়া, দুর্বলতা বোধ করা, বারবার তেষ্টা পাওয়া ইত্যাদি। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে খিদে ও পানির তেষ্টা বেড়ে যায়। আর বহুবার মূত্রালয়ে দৌড়াতে হয়। এ জন্য একে অনেকে বহুমূত্র রোগ বলে থাকেন। কারো কারো দুর্বলতা এত বেশি হয় যে, কোনো ভারী বা বড় কাজকর্ম ছাড়াই যখন তখন হাঁপ ধরে যায়।
বারবার শীরের বিভিন্ন অংশের ত্বকে নানা সংক্রমণ ও ফোঁড়া হয়। মধু মেহের উপসগের্র তালিকা আরো বড়। ডায়াবেটিস হলে অনেকেরই অন্যান্য উপসর্গ থাকে না। শুধু বারবার চশমার পাওয়ার বদলে যায়, কারো বা কোনো ছোট কাটা বা জুতোর ফোসকা সহজে সারে না, ঘা হয়ে যায়। কারো মাথা ঘোরে। অনেকেরই সহবাসে অনীহা দেখা দেয়। কোনো অসুখের জন্য বা রুটিন রক্ত পরীক্ষা করতে গিয়ে হয়তো ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
স্ট্রেসে ডায়াবেটিস বাড়ে: রাস্তা পেরোতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হওয়াটা একধরনের তাৎক্ষণিক স্ট্রেস। বলাই বাহুল্য, যেকোনো ধরনের তাৎক্ষণিক স্ট্রেস রক্তে শকর্রার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। দুর্ঘটনা, প্রিয়জনের বিচ্ছেদ, গর্ভধারণ, শরীরের কোনো অংশের সংক্রমণ, কোনো অপারেশন- এসবই হঠাৎ স্ট্রেস ডেকে আনে। বারবার এ রকম হলে ডায়াবেটিসের প্রবণতা বাড়ে।
দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেসও ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। কর্মক্ষেত্রে সমস্যা, পারিবারিক অশান্তি, দৌড়ে বাস বা ট্রেন ধরা। ভিড় ঠেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছানো ইত্যাদি সবই লাগাতার স্ট্রেসের উদাহরণ। এর ফলেও ধীরে ধীরে মানুষের অগ্ন্যাশয়ের কর্মক্ষমতা কমতে থাকে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে।
আসলে লাগাতার স্ট্রেস বিভিন্ন স্নায়ুর কর্মক্ষমতার ছন্দপতন ঘটায়। ফলে প্রথম দিকে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির নিঃসরণ বাড়ে, পরবর্তী পর্যায়ে কর্টিসোন বেশি নিঃসৃত হয়। এরা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। এ ছাড়া রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো দীর্ঘসূত্রী অসুখ বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে মনের ওপর চাপের সাথে সাথে অবসাদও বাড়ে। আর এসবই মিলেমিশে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে ডায়াবেটিসের প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া 'টাইপ এ' ব্যক্তিত্বের মানুষজন এমনিতেই কিছুটা উদ্বিগ্নতায় ভোগে।
এদের মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের প্রবণতা সাধারণ মানুষের চেয়ে কিছুটা বেশি। সব সময় উচ্চাশা নিয়ে চলে এবং কেরিয়ারের পেছনে দৌড়ায় বলে এদের রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণ মানুষের তুলনায় একটু বেশিই থাকে।
যেসব কিশোর-কিশোরী ছোটবেলা থেকেই ইনসুলিন ডিপেন্ড্যান্ট ডায়াবেটিসে (ডায়াবেটিস টাইপ ১) ভোগে, তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশার প্রবণতা বেশি।

No comments:

Post a Comment

কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা

তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ আবার খাবারের সময় অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ নিয়ে রুচিসহকারে খেতে থাকেন। তাঁদের জন্য আরও সুখ...