ডায়াবেটিস রোগীর অন্যান্য আন্ত্রিক অসুখ বিসুখের সাথে সাথে দাঁতের সমস্যা ও মুখ গহ্বরের বিভিন্ন সমস্যাতেও অধিক হারে ও জটিলতর ভাবে ভোগেন। এ সমস্যাটি অনেকেরই অগোচরে ঘটে যাবার সম্ভাবনা থেকে যায়। ডায়াবেটিস হয়নি এমন লোকের দাঁত ও মুখ গহ্বরের কিছু কিছু সমস্যা থাকে। ডায়াবেটিস রোগীরা নিম্নলিখিত সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন যে কোন সময়।
* দাঁত ক্ষয় (ডেন্টাল ক্যারিজ)
* মাড়ির প্রদাহ (জিঞ্জিভাইটিস)
* কোষ প্রদাহ (সেলুলাইটিস)
* মুখের সাদা অংশে বিভিন্ন ধরণের ঘা
* নিশ্বাসে অ্যাসিটোনের গন্ধের উপস্থিতি।
ডায়াবেটিসে রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজের উপস্থিতির কারণে শরীরের অন্যান্য অংশের মত মুখ ও দাঁতেও রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। এ জন্য সামান্য কোন আঘাতেই জীবাণু সংক্রমন ঘটাতে পারে। আর ইতোমধ্যেই কোন প্রদাহ থেকে থাকলে তা দীর্ঘ সূত্রী রূপ ধারণ করে। ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়ই মাড়ির প্রদাহে ভোগেন। তাদেরও দেহে ইনসুলিনের অভাবজনিত আমিষের অভাব দেখা দেয়। ফলস্বরূপ কোষের স্বাভাবি বৃদ্ধি সংরক্ষণ ও উৎপাদন ব্যাহত হয়।
মুখের কোন স্থানে ঘা হলে তা সহজে শুকাতে চায় না। নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। ডায়বেটিস রোগীদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সব মিলিয়ে দাঁতের গোড়ায় প্লাক জমে মাড়ির প্রদাহ শুরু হয়। এর পরই আসে দাঁত ক্ষয় (ডেন্টাল ক্যারিজ) এর প্রসঙ্গ। ডায়াবেটিস রোগীরা বিপুল সংখ্যাক দাঁত ক্ষয় সমস্যায় আক্রান্ত হন। এর কারণ হলো ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজের (বিশেষ করে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের) মতই লালাতেই বেশি গ্লুকোজ তাকে। এ গ্লুকোজ প্রতিনিয়ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীবের সাথে মিলে ল্যাকটিক এ্যাসিড তৈরি করে। ল্যাকটিক অ্যাসিডের ঘন ঘন বা দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি দাঁতের শক্ত আবরণ এনামেল কে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এ ক্ষয় ক্রমশ দাঁতের ভিতরে অংশকেও ছোঁয়ে ফেলে এবং ডেন্টাল ক্যারিজ করে। আবার ডায়াবেটিস রোগীদের মুখের ভিতরে লালার স্বাভাবিক গতিও বাধাগ্রস্ত হয়। এজন্য খাবার সময়ে যথেষ্ট পরিমাণে লালা নি:সরণ নাও হতে পারে। ফলে মুখের ভিতরে খাদ্য কণিকা অধিক সময় জমে থাকতে পারে বা ডেন্টাল প্লাক তৈরীর ভূমিকা রাখতে পারে। অনেক ডায়াবেটিস রোগীর মাড়ি ও দন্তবাহক কলা দুর্বল থাকায় তারা বেশি জোরে খাবার চিবাতে পারে না। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের প্রধান খাদ্য গ্রহণের মাঝে (যেমন সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার ও রাতরে খাবার সময়ে শর্করা প্রধান খাদ্য দ্রব্য যেমন কফি, লজেন্স, চুইংগাম, ইত্যাদি) খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। প্রতিবার খাদ্য গ্রহণের পর পানি দিয়ে অবশ্যই কুলকুচি করতে হবে। মুখ সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে।
প্রতিবার খাদ্য গ্রহণের পর বা অন্তত দিনে দু'বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে। দাঁত ব্রাশ করার পর অন্তত এক মিনিট আঙ্গুলের সাহায্যে মাড়ি মালিশ করা প্রয়োজন। এতে মাড়িতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং মাড়ি শক্ত ও মজবুত হয়। দাঁতে কখনো গর্ত বা কালো দাগ দেখা দিলে এবং মাড়ি থেকে সামান্য আঘাতে রক্ত বের হলে অবহেলা না করে ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। পান সুপারী, সে সাথে জর্দা, চুন এবং ধুমপান মাড়ির রোগকে ত্বরান্বিত করতে পারে। অতএব ডায়াবেটিস রোগীকে অবশ্যই এ সকল অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। নিয়মিত দাঁত ও মাড়ির যত্ন নিলে এ সমস্ত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভ তবে প্রতি বছরে দুই বার দাঁত ও মুখ পরিক্ষা করালে প্রাথমিক অবস্থাতেই রোগ ধরা পড়তে পারে এবং চিকিৎসায় তা নিরাময় হতে পারে।
No comments:
Post a Comment