Sunday, November 22, 2015

জায়ান্টসেল টিউমার অব বোন -অষ্টিও ক্লাস্টোমা কি



Image result for টিউমার picture

সারকোমা বা অস্থির ক্যানসার একটি প্রাণহরণকারী ব্যাধি। অষ্টিওক্লাষ্টোমা বা জায়ান্টসেল টিউমার অতীব গুরুত্বপূর্ণ অস্থি টিউমার যাকে বেনাইন/ ক্ষতিকারক শ্রেণীভূক্ত করা হয়েছে। এই টিউমার স্থানীয়ভাবে অপসারণ কিংবা কিউরিটেজ বা পরিষ্কার করার পর আবার দেখা দেয়। শতকরা দশভাগ (১০%) টিউমার পরিষ্কারভাবে "ম্যালিগন্যান্ট" বা প্রাণহরণকারী টিউমারের মত আচরণ করে থাকে এবং রক্তের প্রবাহের মাধ্যমে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই টিউমার সাধারণত যুবক যুবতীদের মধ্যে দেখা যায়। 
কেন হয় এবং কিভাবে হয়: সাধারণত কতকগুলো অস্থি আক্রান্ত হওয়ার বিশেষ প্রবণতা "জায়ান্টসেল টিউমারে" দেখা যায়।- যেমন: ফিমারের নীচের অংশ, টিবিয়ার উপরের অংশ, রেডিয়াসের নীচের অংশ এবং হিউমারাসের উপরের অংশ ইত্যাদি। এ সকল লম্বা অস্থির এই অংশগুলোতে সর্বাধিক পরিমানে দৈহিক বর্ধন হয়ে থাকে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগত কারণে অস্থির এক প্রান্তে আক্রান্ত হয় যেটাকে এপিফাইসিস বলা হয়, সেখান থেকে পাশ্র্বের সন্ধি: বা জয়েন্ট প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এই টিউমার অস্থির গাঠনিক বস্তুসমূহ ধ্বংস করে, নূতন অস্থি তৈরী করে অস্থি আবরণী বা পেরিওষ্টিয়ামকে অস্থি হতে আলাদা করে দূরে সরে দেয়। যার ফলে আক্রান্ত অস্থি মোটা হয়ে বিস্তৃতি লাভ করে। কিছু অস্থি ট্রবিকুলি টিউমারের মাঝে অবস্থান করে আক্রান্ত অস্থিকে প্রাচীরের ন্যায় ভাগ করে। অস্থি নরম হওয়ার কারণে প্যাথোলজীক্যাল ফ্রাকচার হয় বা আক্রান্ত অস্থি ভেঙ্গে যায়। 
হিষ্টোলজীক্যাল পরীক্ষায় টিউমার সেলের মাঝে 'জয়েন্ট সেল' দেখতে পাওয়া যায় যা বিশেষ চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য বহন করে। তবে কেন এটা হয় তা এখনো নিশ্চিত নয়। আংশিক অপসারণ করা হলে 'জায়ান্ট সেলটিউমার' এর পুনরাবৃত্তি ঘটে বা "ম্যালিগন্যান্ট জায়ান্ট সেল" এবং ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে। 
উপসর্গ/লক্ষণ: লম্বা-অস্থির আক্রান্তস্থানে ব্যথাই প্রধান উপসর্গ। তবে আস্তে আস্তে অস্থিপ্রান্ত ফুলে যেতে থাকে। ব্যথা রাতের বেলা বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় আক্রান্ত স্থানে আঘাতের ইতিহাস থাকে। টিউমারের উপরিস্থিত চামড়া গরম থাকে। হালকা চাপ দিলে অনেক সময় ডিমভাঙ্গার মত মচমচে শব্দ হতে পারে। আবার হঠাৎ অস্থি ভেঙ্গে গেলে রুগী সহজেই তা অনুধাবন করতে পারে। 
পরীক্ষা-নিরীক্ষা: রক্তের রুটিন পরীক্ষায় ইএসআর বৃদ্ধি দেখা যায় রক্তের পরীক্ষায় সিরাম এসিড ফসফাটেজ বৃদ্ধি ধরা পড়ে। এছাড়া সিরাম ক্যালসিয়াম, সিরাম এলক্যাইন ফসফাটেজ ইত্যাদি পরীক্ষা দ্বারা ব্রাউন টিউমার, মাল্টিপল মাইলোমা প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত কিনা তা স্ক্রিনিং করা যায়। 
এক্সরে: ক্ল্যাসিকাল পর্যবেক্ষণে দেখা যায় -এপিফাইসিসে, বর্ধনশীল বা এক্সপানসাইল, একসেন্ট্রিক বা কেন্দ্রবহির্ভূত টিউমার। প্রথম দিকে 'সোপ বাবল' বা সাবানের ফেনার মতো এবং পরের দিকে 'রেডিওলুসেন্ট টিউমার' সহজেই এক্সরে-তে দৃশ্যমান হয়। আবার অনেক সময় অস্থির কর্টেক্স ভেঙ্গে গেছে তাও ধরা পড়ে; শেষের দিকে এক্সরেতে প্যাথোলজীক্যাল ফ্রাক্চার ধরা পড়ে। 
এমআরআই: টিউমারের পুরাপুরি বিস্তৃতি এমআরআই করলে ধরা পড়ে। 
সিটিস্ক্যান: সিটি স্ক্যান করলে টিউমারের বিস্তৃতি এবং গ্রেডিং করতে সুবিধা হয়। 
বায়োপসি: টিউমারের চরিত্র নির্ধারণের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হলো বায়োপসি। যার মাধ্যমে টিউমারের ধরণ নিশ্চিত হওয়া যায়। 
'জায়ান্ট সেল টিউমার' লম্বা অস্থি ছাড়াও প্যাটেলা, কশেরুকা স্যাক্রাম, পাঁজরের হাড়/ রিব, ক্লাভিকল, চোয়ালের অস্থি প্রভৃতি অস্থিতেও হতে পারে। 
চিকিৎসা: যত রকেমের টিউমার অস্থিতে দেখা যায় তার মধ্যে 'জায়ান্টসেল টিউমার' এর চিকিৎসা সবচেয়ে বিব্রতর। এর প্রধান কারণ হলো- এই টিউমারের অপারেশন পরবর্তী পুনরাবৃত্তির হার খুব বেশী। তাই চিকিৎসার অনেক ধরণের পদ্ধতি আছে। চিকিৎসা নির্ভর করে কোন অস্থিআক্রান্ত, রোগের পর্যায় এবং রোগীর সহযোগিতার উপর। কিছু আক্রান্ত অস্থি কেটে ফেলা যেতে পারে হোক তা আংশিক অথবা সম্পূর্ণ যেমন- জায়ান্টসেল টিউমার অব ক্লাভিকল রিব অথবা ফিবুলা। আবার কিছু অস্থি আছে যা কেটে ফেললে চরম পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। যেমন ফিমার, হিউমারাস, টিবিয়া। তাই চিকিৎসার অপশন নানান ধরণের। নিম্নে সংক্ষেপে কিছু পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
১। শুধু মাত্র কিউরিটেজ: এক্ষেত্র পুনরাবৃত্তির হাড় ৮৫%।
২। কোটা রাইজেশন: কেমিক্যাল অথবা ইলেক্ট্রো কোটারী করা যেতে পারে। 
৩। কিউরিটেজ এন্ড বোন গ্রাফট: এক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তির হার (৩০-৪০)%
৪। কিউরিটেজ এন্ড বোন সিমেন্ট: কিউরিটেজ করার পর বোন সিমেন্ট দিয়ে প্যাকিং করা হয়। 
৫। ওয়াইড এক্সিসন: এক্ষেত্রে মেজর জয়েন্ট পর্যন্ত স্যাক্রিফাইস করা হয় এবং প্রোস্থেসিস দ্বারা সন্ধি রিপ্লেজমেন্ট করা হয়। যেমন- হাঁটু- সন্ধি, উরু সন্ধি, স্কন্ধ: সন্ধি ইত্যাদি। 
৬। রেডিও থেরাপী: যে সকল টিউমার কেটে ফেলা যায় না সেক্ষেত্রে রেডিও থেরাপী দেয়া হয়। যার ফলাফল ভাল। 
৭। কেমোথেরাপী: হিউজ মাপের টিউমার কিংবা যে সকল টিউমারের কাছে পৌছা কঠিন সেক্ষেত্রে কেমোথোরী দেয়া যায়। 
তবে রেডিওথেরাপির ঝুঁকি হলো পরবর্তীতে রেডিওথেরাপী ইনডিউসড ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে যে কোন পদ্ধতির চিকিৎসা গ্রহণ করা হোক না কেন আংশিক বা অসম্পূর্ণ অপসারণ কিংবা, আংশিক চিকিৎসা গ্রহণ এই টিউমারের পুনরাবৃত্তির অন্যতম কারণ এবং পুনরায় যে টিউমার দেখা দিবে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক, প্রাণনাশকারী ম্যালিগন্যান্ট জায়ান্টসেল টিউমার। তাই এই টিউমারের চিকিৎসা অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ 
অর্থোপেডিক সার্জনের কাছে নিতে হবে। নচেৎ জটিলতা বাড়বে।

No comments:

Post a Comment

কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা

তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ আবার খাবারের সময় অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ নিয়ে রুচিসহকারে খেতে থাকেন। তাঁদের জন্য আরও সুখ...