মুখের দুর্গন্ধ অত্যন্ত বিড়ম্বনাকর। দুর্গন্ধের কারণে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ড ব্যাহত হতে পারে। অধ্যাপক জন টাগ সর্বপ্রথম স্বাস্থ্যবান শিশুদের মাঝে স্ট্রেপটোকক্কাস স্যালিভারিয়াস 'কে-১২' ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করেন। যাদের মুখে এ ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান তারা মুখের দুর্গন্ধজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন না। সারা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে মাত্র শতকরা ২ ভাগ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থায় স্ট্রেপটোকক্কাস স্যালিভারিয়াস কে-১২ ব্যাকটেরিয়া মুখের অভ্যন্তরে পাওয়া যায়। এ উপকারী ব্যাকটেরিয়া জিহ্বার উপরিভাগে পাওয়া যায়। এ ব্যাকটেরিয়া মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করে মুখের স্বাভাবিক সজীবতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। যাদের মুখে দুর্গন্ধ আছে তারা স্ট্রেপটোকক্কাস স্যালিভারিয়াস 'কে-১২' সমৃদ্ধ কে ফোর্স ব্রেথ গার্ড মাউথ ওয়াশ প্রতিদিন ব্যবহার করলে সুফল পাবেন। ব্যাকটেরিয়া রোগ সৃষ্টি করে ঠিকই কিন্তু এমন একদিন আসবে যখন ব্যাকটেরিয়া দ্বারাই রোগের নিরাময়সহ বহুবিধ চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।
জিহ্বার খসখসে ভাব জিহ্বার প্যাপিলার জন্য হয়ে থাকে। জিহ্বার প্যাপিলা নষ্ট হয়ে গেলে জিহ্বা মসৃন দেখা যায়। বিভিন্ন রোগে জিহ্বার রং এর পরিবর্তন দেখা যায়। বিশেষ করে রক্তশূন্যতা, জিহ্বার প্রদাহ বা গ্লসাইটিস বা লাইকেন প্ল্যানাস, সিফিলিস বা ক্যান্সার ইত্যাদি রোগে জিহ্বার স্বাভাবিক রং এর পরিবর্তন হয়ে থাকে। জিহ্বার ফ্যাকাসে রং রক্তশূন্যতার প্রতিফলন। জিহ্বার নীল রং অক্সিজেনের স্বল্পতার ইঙ্গিত বহন করে। জিহ্বার সাদা রং মৃত কোষ এবং সাদা আবরণ ওরাল থ্রাশ, ক্যান্সার অথবা এইডস রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে। জিহ্বার রং যে সব দিকে পরিবর্তিত হতে পারে এবং তা থেকে যে সব রোগের ধারণা পাওয়া যায় তা হল-
জিহ্বার ফ্যাকাসে রং ঃ জিহ্বার ফ্যাকাসে রং রক্তশূণ্যতা, পুষ্টির অভাব, ভিটামিন স্বল্পতা, দুর্বল রক্ত সঞ্চালন অথবা জটিল পুরাতন রোগের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। জিহ্বার লাল বা লালাভ বর্ণ ঃ জিহ্বার লাল রং সংক্রমণ, প্রদাহ এবং গ্লসাইটিসের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। এছাড়া পুষ্টিজনিত সমস্যা, ভিটামিন বি অর্থাৎ নিয়াসিন এর অভাবজনিত সমস্যা পেলেগ্রার ক্ষেত্রে জিহ্বা লাল বা লালাভ বর্ণ ধারণ করতে পারে। পান সেবনের কারণেও জিহ্বার বর্ণ লাল হতে পারে। জিহ্বার হলুদ বর্ণ ঃ জন্ডিস এবং ধূমপানের ক্ষেত্রে জিহ্বার হলুদ বর্ণ হতে পারে।
জিহ্বার নীল রং ঃ কেন্দ্রীয় সায়ানোসিস এবং সি.ও.পি.ডি. রোগের ক্ষেত্রে জিহ্বার বর্ণ নীল হতে পারে। পার্পল রং ঃ সায়োনোসিস রোগের ক্ষেত্রে পার্পল রংয়ের জিহ্বা দেখা যেতে পারে। জিহ্বার বাদামি রং ঃ বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থতার ক্ষেত্রে জিহ্বায় বাদামি রং হতে পারে।
জিহ্বার সাদা রং ঃ ডিহাইড্রেশন, ফাংগাল সংক্রমণ, লিউকোপ্লাকিয়া, লাইকেন প্ল্যানাস, সিফিলিস রোগে জিহ্বা সাদা হতে পারে। স্ট্রবেরি জিহ্বা ঃ স্কারলেট ফিভার এবং কাওয়াসাকি রোগে স্ট্রবেরি টাং বা জিহ্বা দেখতে পাওয়া যায়।
জিহ্বার কালো রং ঃ লাইকেন প্ল্যানাস এবং ফাংগাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে কখনো কখনো কালো জিহ্বা দেখতে পাওয়া যায়। মানচিত্র জিহ্বা ঃ একে জিওগ্রাফিক টাং বলা হয়। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে জিওগ্রাফিক টাং দেখতে পাওয়া যায়। জিহ্বার রং অস্বাভাবিক এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনতে হবে এবং রোগীদের এর যথার্থ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মুখস্ত ঔষধ সেবন বর্জন করতে হবে।
আঠালো খাবার ক্যান্ডি, চকোলেট ইত্যাদি খাবার পর দাঁত ব্রাশ করতে না পারলে ভালভাবে কুলকুচি করতে হবে। বাচ্চাদের যদি একান্তই বেশি চকোলেট খাওয়ার অভ্যাস থাকে সেক্ষেত্রে দুপুরের খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে চকোলেট দেওয়া যেতে পারে। এতে করে দুপুরের খাবারের সময় চকোলেটের আঠালো অংশ অপসারিত হয়ে যায়। লালাতে এমন কিছু গুণাগুণ বিদ্যমান যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ এবং দন্তক্ষয় রোধে ভূমিকা রাখে। বয়ঃসন্ধিতে এই উপাদানের পরিমাণের তারতম্য ঘটে। তাই মাড়ি ও দাঁতের সংক্রমণ হতে পারে। এ সময় সচেতন হওয়া জরুরী। শিশুদের ক্ষেত্রে বুকের দুধ পান করার সময় দুধের স্তর মাড়িতে শুকিয়ে ফাংগাল সংক্রমণ হতে পারে। তাই নরম জীবাণুমুক্ত গজ বা তুলা দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত। বয়স্ক লোকদের মধ্যে যাদের দাঁতের গোড়ায় দন্তক্ষয় থাকে তাদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন হতে পারে। যদি সি রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন বেশি থাকে তাহলে ভবিষ্যতে ঐ রোগীর হৃদরোগের সম্ভাবনা বেশি বা হতে পারে। আবার আপনার ডায়াবেটিস থাকলে পেরিওডন্টাল রোগ দেখা দিতে পারে। মাড়ি রোগের ক্ষেত্রে কোন প্রকার অবহেলা করা যাবে না। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাড়ি রোগে সি রিঅ্যাকটিভ প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই মাড়ি রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে যথাযথভাবে এবং দ্রুততম সময়। দাঁতের এমব্রুসর ঠিক না থাকলে বা কমে গেলে পেরিওডন্টাল পকেট সৃষ্টি হয়। তাই আপনার দাঁতের সংযোগস্থল এবং দাঁতের অবস্থান, আকৃতি ঠিক আছে কিনা তা ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। এ ছাড়াও আপনার উপরের দাঁত এবং নিচের দাঁত কামড় দিলে সৃষ্ট অবস্থান স্বাভাবিক কিনা অর্থাৎ দাঁতের অকলুশন ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করা উচিত।
No comments:
Post a Comment