Monday, November 2, 2015

দশটি বিব্রতকর রোগ


বিব্রতকর স্বাস্থ্য সমস্যা অনেকেই এড়িয়ে যান। এ নিয়ে কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন। মনে করো ঠিক হবেনা যে আপনি একা; অনেকেই আছেন। মাথায় খুশকি থেকে শুরু করে মুখে দুর্গন্ধ এমনকি শরীরে আঁচিল ও অনেক সমস্যা নিয়েই কথা বলতে চাইনা আমরা। পাছে লোকে কি বলে’ সেই ভয়ে।

আঁচিল, তিল

সাধারণ আঁচিল দেখতে অসুন্দর। তবে সুসংবাদ হলো বেশিরভাগ হলো নিরীহ। তবে যদি ক্রমে ক্রমে এর আয়তন বাড়ে, রং বদলায় তাহলে ডাক্তারকে বলতে হবে। ভাইরাসের কারণে হয়। হতে পারে হাতে, পায়ে, আঙ্গুলে ও গায়ে। অনেক সময় হয় হিউম্যান প্যানিলোমা ভাইরাসের জন্যও। আঁচিল হলে ভয়ের কিছু নেই। প্রয়োজনে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া। অনেক সময় লেজার প্রয়োগে আঁচিলের রক্ত সরবরাহ কমে যায়, তাই এটিও যায় শুকিয়ে।

পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ছত্রাক

এথলেট ফুট যখন নখকে আক্রমণ করে। একে এড়াতে হলে যতদূর সম্ভব পা’কে শুকনো রাখতে হবে। পেডিকিউর করাতে হলে নিজস্ব যন্ত্রপাতি দিয়ে করানো ভালো। জিমে গোসল করতে গেলে ফ্লিপ ফ্লপ বা খোলা স্যানডেল পরা উচিত। চিকিত্সক লেভাইন মনে করেন

স্থানিক ওষুধ প্রয়োগের চেয়ে ওষুধ সেবন বেশি কার্যকর। ডাক্তারের পরামর্শ চাই এজন্য।

পায়ে দুর্গন্ধ

পায়ে দুর্গন্ধের বড় কারণ হলো পায়ে ঘাম হওয়া। পায়ে হয়ত প্রচুর স্বেদ গ্রন্থি। হয়ত একদিনে পা থেকে ঘাম হতে পারে এক পাঁইটের মত। আর স্নিকার ও জুতো থেকে ব্যাকটেরিয়া, মোজা থেকে জীবানু ঘামের সঙ্গে মিশে পায়ে শুরু হয় দুর্গন্ধ।

চিকিত্সা

পা থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া এড়াতে হলে কয়েকটি সহজ কাজ করা যায়। যেমন- পরিষ্কার মোজা পরা, জুতা বদল করে পরা এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে পা ধোয়া, তার পর শুকানো।

এন্টিপারস্নিরেন্ট পায়ে প্রয়োগ করলে সুফল হতে পারে। এরপরও দুর্গন্ধ না গেলে ডাক্তার দেখাতে হবে। আছে ওষুধ যা পায়ের ঘাম সি:সরণ কমায়, হ্রাস করে ব্যাকটেরিয়াও।

খুব বেশি ঘাম হওয়া

বেশি ঘাম হলে সামলাতে তো হবে। উপায় কি। আমরা সবাই কম বেশি ঘামি। শরীরকে শীতল রাখার জন্য ঘামা তো চাই। তবে কেউ কেউ খুব বেশি ঘামেন। মাত্রার অতিরিক্ত। একে চিকিত্সা বিজ্ঞানে বলে ‘hyper hidrosis’ ফলে বারবার প্রচুর ঘাম হয় শরীরে। স্বেদগ্রন্থি অতিসক্রিয় থাকার কারণেই হয়তবা ঘটে।

সুসংবাদ হলো এর রয়েছে কার্যকর চিকিত্সা। প্রথমে এন্টিপারসিপরেন্ট ব্যবহার করে দেখা যায়। যাতে আছে এলুমিনিয়াম ক্লোরাইড। এতে কাজ না  হলে ডাক্তার দেখাতে হবে।

প্রস্রাব ধরে রাখতে অসুবিধা

চিকিত্সা বিজ্ঞানে বলে ‘ইনকনটিনেন্স’। আমেরিকাতে এ সমস্যা রয়েছে ১৩০ লক্ষ লোকের। কিন্তু এই বিব্রতকর অবস্থা নিয়ে বেঁচে থাকা কেন। ইউরোলজিস্ট ডা: ডেব্রা ফ্রমার বলেন, প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারার সমস্যা জীবনের স্বাভাবিক অংশ নয়। এতে ক্ষমতা খর্ব হয়। তাই এর চিকিত্সা প্রয়োজন।

সমস্যা কখন হয়

যে সব পেশী মূত্রথলিপথকে বন্ধ রাখে সেগুলো খুব দুর্বল হলে বা অতিসক্রিয় হলে শুরু হয় সমস্যা। পেশীগুলো দুর্বল হলে সামান্য হাঁচি-কাশি, একটু হেসে উঠাতে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। পেশীগুলো অতি সক্রিয় হলে বাথরুমে যাবার প্রবল তাগিদ হবে। একে বলে অতিসক্রিয় মুত্রথলি। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে গর্ভধারণ, প্রসব, প্রোস্টেট গ্রন্থির সমস্যা এবং স্নায়ুর ক্ষতি।

চিকিত্সা

হেতুর উপর ভিত্তি করে চিকিত্সা। সহজ সরল ব্যায়াম, ওষুধ বা সার্জারি। ফ্রমারের পরামর্শ; সহজ ঝোলাবার জন্য বন্ধনী ব্যবহার করে অনেক নারীর সমস্যা লাঘব হয়। হার্নিয়া মেরামতিতে যেমন ব্যবহার করা হয় সেরকম ছোট এক ফালি জাল বসানো হয় মূত্রপথের নিচে। স্ত্রীযোনি ও মূত্রপথের মাঝখানে। এতে মূত্রপথের একটি অবলম্বন হয়। এই ছোট সার্জারিতে জটিলতা অতি সামান্য। পায়ে কারো কারো সামান্য ব্যথা হতে পারে কয়েক দিন।

অর্শরোগ

অর্শরোগ একটি স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ। কতজন লোক এদেশে অর্শরোগে ভোগছেন এর পরিসংখ্যান আমার জানা নেই। তবু যতটুকু জানা যায় এতে মনে হয় রোগীর সংখ্যা অনেক। আর যারা গোপনে রাখেন একে এদের সংখ্যাও সম্ভবত: অনেক। আমেরিকায় এককোটি লোক অর্শরোগ নিয়ে আছেন এমন অনুমান।  মলদ্বারে শিরার উপর অতিরিক্ত চাপের জন্য এমন অবস্থা। এমন যখন ঘটে, তখন শিরাগুলো স্ফীত হয়, প্রসারিত হয় এরপর জ্বলুনি, চুলকানি আর রক্তক্ষরণ। কেন হয় এ রোগ। অর্শরোগ হতে পারে দীর্ঘদিন কোষ্টবদ্ধতা থাকলে। দীর্ঘক্ষণ একনাগাড়ে বসে থাকা, মলনালীতে সংক্রমণ। কোন কোন ক্ষেত্রে অন্যরোগের প্রভাবেও হতে পারে, যেমন- যকৃতের সিরোসিস।

চিকিত্সা

সৌভাগ্যবশত: আছে কয়েক ধরণের চিকিত্সা যেমন- ক্রিম; চুলকানি ও স্ফীতি উপশম করে। উইচ হ্যাজেল চুলকানি ও স্ফীতি আরাম দেয়। উষ্ণবাথে ১০-১৫ মিনিট বসে থাকলেও হয় আরাম। বেশিরভাগ চিকিত্সা কার্যকর ক্ষেত্র হলো বিশেষ সার্জারি। আঁশ সমৃদ্ধ খাবারে নরম মল হয়।

চুলে খুশকি

গাঢ় রঙ্গের শার্টে সাদা সাদা তুষার কনার মত আঁশ। অনেকেরই হয় এমন। খুশকি মাথায় আছে অনেকেরই। চুলকানি হয়, মাথা থেকে শল্ক পতন ঘটে, শুভ্র আশের মত ত্বকের ক্ষুদ্রখন্ড ঝরে। শুশকি হয় নানা কারণে। শুষ্ক ত্বক, শ্যাম্পু না করা, সোরাইসিস ও একজিমা। এই সাদা সাদা আঁশ হতে পারে বিব্রতকর। তবে খুশকি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। খুশকির জন্য শ্যাম্পু। ডাক্তারের পরামর্শ করেও নিতে পারেন শ্যাম্পু।

কেশ হানি

মাঝে মাঝে কেশ পতন। এরপর কেশহানি। কেন রেখা পাতলা হতে শুরু করে। টেকো হবার একটি

নমুনা ও ধরণ আছে। নারী ও পুরুষের এক তৃতীয়াংশের কেশ

হানি হয়। অনেকে টেকো হলে

তেমন কিছু মনে করেনা। তবে অনেকের আত্মমর্যাদা আহত হয়। কারণ অতিরিক্ত কেশ হানি ঘটতে পারে অজ্ঞাত কোনও রোগের জন্য। বা ত্রুটিপূর্ণ খাদ্য, কিছু ওষুধ, হরমোনে পরিবর্তন এবং জীনগতির কারণে। টাকের কোন নিরাময় নেই। তবে কেশ গজানো-বাড়ানোর উপায় আছে। এফডিএ অনুমোদিত ওষুধ হলো ‘রোগেন’ এবং ‘প্রপেসিয়া’ সার্জারিও প্রয়োজন হতে পারে। বিকল্পগুলো নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করা যেতে পারে।

অতিরিক্ত কেশ ও লোম বৃদ্ধি

লোমশ ও রোমশ শরীর বলে কথা। বুক বা পিঠ লোমশ হলে তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু মুখে কেশ বেশি গজালে, সারা মুখভরে কেশ, লোম উঠলে সমস্যা। হারসুটিজম হলে মহিলাদের মুখমন্ডল, বুক, পিঠ, তলপেটে অতিরিক্ত কেশ গজানো বা লোম গজায়। এমন হতে পারে নারীদেহে খুব বেশি পুংহরমোন উত্পাদন ও ক্ষরণ। পারিবারিক ইতিহাস ও গোত্রভেদে একটি উপাদান।

চিকিত্সা

হারসুটিজমের চিকিত্সা হলো কয়েকটি ওষুধ একত্রে প্রয়োগ, কেশ অপসারণ, ইলেকট্রোলাইসিস বা লেজার থেরাপি। সে সঙ্গে নিজের দেখভাল করা। এই বিদঘুটে অসুখের নাম (werewolf syndome) এই ধরণের অতিরিক্ত কেশবৃদ্ধি বা হাইপারট্রাইকোসিস একটি বিরল রোগ। সারা শরীর বা নিদিষ্ট স্থানে প্রচুর কেশ জন্মায়। যদিও এ রোগ কেন হয় তার সঠিক উত্তর জানা নেই। অনেকের ধারণা এটি একটি জীনগত বৈকল্য। চিকিত্সার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কেশ বৃদ্ধির ধরণ বিশেশে চিকিত্সা করেন ডাক্তার। ওষুধ বা কেশ অপসারণ করে।

মুখে দুর্গন্ধ

মুখে দুর্গন্ধ হওয়া খুব বিব্রতকর। গাম, মিন্ট, মাউথওয়াশ, জিব

ফ্রেপার কত কিছু আছে একে দূর করার জন্য। একে ইংরেজিতে বলে ‘হালিটোসিস’। কিছু খাদ্যে হজমের সমস্যা, দাঁতের পরিচ্ছন্নতা ঠিকমত না করলে, জিব পরিষ্কার না করলে, দাঁতের রোগ, শুষ্ক মুখ এবং খুব ধূমপান করলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। অনেক সময় দাঁত ব্রাশ করলে,

জিব পরিষ্কার করলে, ফ্লশ করলে, মাউথ ওয়াস দিয়ে কুলিকরলে, কিছু খাবার যেমন রসুন পরিহার করলে মুখ সজীব হয়। তবে দুর্গন্ধ স্থায়ী

হলে চিকিত্সক বা ডেন্টিস্টের

পরামর্শ প্রয়োজন।

No comments:

Post a Comment

কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা

তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ আবার খাবারের সময় অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ নিয়ে রুচিসহকারে খেতে থাকেন। তাঁদের জন্য আরও সুখ...