Saturday, November 14, 2015

ব্যথার ওষুধ নিজে নিজে খাবেন না



আমাদের কথা বলছিনা কারণ প্রেসক্রিপশন ছাড়া প্রায় সব ওষুধ যে কোনও কেউ, যেকোন ফার্মেসী থেকে ক্রয় করতে পারেন। চিকিত্সা সেবায় এই উশৃঙ্খলা যে প্রাণনাসের বড় কারণ হতে পারে তা আমরা সাধারণভাবে দেখতে পারছিনা। উন্নতদেশ বলে দাবীদার আমেরিকার কথা বলি। ও.টি.সি ড্রাগ বা ওভার দি কাউন্টার কিছু ওষুধ বেশি খেলে যে কি রকম প্রাণসংশয় হতে পারে, একেই উল্লেখ করছি। এসব ওষুধ কিনতে ব্যবস্থাপত্র লাগেনা। লক্ষ লক্ষ আমেরিকান ওভার দি কাউন্টার পেনিকলার এডভিল বা এলিভ খান যে কোনও সাধারণ ঠান্ডা লাগা, ব্যথা বেদনায়। সাত পাঁচ না ভেবে গপগপ করে ওষুধ খেয়ে নেয়। অনেকেই জানেন না এসব হলো ভয়ংকর ওষুধ-নন স্টেরয়ডাল এন্টি ইনফ্লামেটরি ড্রাগস (এনএসএআইডি)। প্রতি বছর এ ওষুধ সেবনে আমেরিকায় মারা যান ১৬,০০০ লোক। এর আর একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে, এনএসএআইডি ওষুধ পাচক নলের দেয়ালের ক্ষতি করে একটি জটিল রোগের সৃস্টি করে, বিজ্ঞানীরা একে বলে ‘লিয়াকি ঘাট’। এ প্রসঙ্গে একটি ছোট বাচ্চা মেয়ের এনএসএডি ওষুধ দ্বারা চিকিত্সা ও তার পরিনতির কাহিনী শোনাই আপনাদের।

৫ বছরের শিশু সারাহকে তার মা নিয়ে এলেন হাসপাতালে। শরীরের নানান হাড়ের গিটে যেমন গোড়ালি, কনুই, হাতের আঙ্গুলের গিটে প্রচন্ড ব্যথা ও ফোলা। হাটতেও তার বড় কষ্ট হয়। তার বড় শখের জিনিষ চিত্রাঙ্কন, এটি করতেও বড় কষ্ট। তার মা ও শিক্ষকেরা লক্ষ্য করেছেন সদাহাস্য, ক্রীড়াচঞ্চল সেই মেয়েটি কেমন এক গভীর দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত, বিষন্ন। এক বছর আগে সে ছিলো খুব ভালো। একদিন তার খুব ঠান্ডা লাগলো ও খুব জ্বর। সেই জ্বর প্রায় এক সপ্তাহ স্থায়ী হলো। শিশু চিকিত্সক সারাহর মাকে বললেন সারাহকে সাত দিন ধরে পালাক্রমে ইবুপ্রুফেন ও টাইলেনল দিতে বললেন অস্বস্তি ও জ্বরের জন্য।

এনএসএআইডি সম্বন্ধে ডাক্তাররা যা জানেন এবং অনেকেই হয়তো যা জানেন না- শেখানো হয়েছে এনএসএআইডি পরিবারের ওষুধ ইবুপ্রুফেন গ্যাস্ট্রাইটিস করতে পারে। শেখানো হয়েছে যে, খুব বেশি খেলে হতে পারে পাকস্থলীর আলসার, এথেকে রক্ত ক্ষরণ, একে সামলাতে অনেক সময় প্রয়োজন হয় সার্জারি ও ব্লাড ট্রান্সফিউশনের। তবে যা অনেক সময় অনেকের জানার বাইরে থাকে তা হলো, এমনকি স্বল্প সময়ের জন্য নিয়মিত মাত্রায় এ ওষুধ খেয়েও পাকস্থলীর ক্ষতি হতে পারে এবং নেতিবাচক স্বাস্থ্য পরিনতি হতে পারে। কেবল বাচ্চাদের ব্যাপারে নয়, সব বয়সেও এরকম হতে পারে।

গত দুই দশকে অনেকগুলো বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এনএসএআইডি ব্যবহার ও লিইকি গাট সিনড্রোম এর মধ্যে একটি পরস্পর সম্পর্ক পাওয়া যায়। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রচলিত সব ধরণের এনএসএআইডি ওষুধের সঙ্গে ক্ষুদ্রান্ত্রতের প্রদাহ সমভাবে সম্পর্কযুক্ত। আর একটি গবেষণায় দেখা গেছে এনএসএআইডি অন্ত্রের কাঠামো ও সংহতি ধ্বংস করে এবং দীর্ঘ মেয়াদী চিকিত্সায় ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রদাহ ঘটায়। সারাহর ব্যাপারে দীর্ঘ মেয়াদ বলতে মাত্র ৭ দিন।

লিক গাট কেন বিপজ্জনক

এমন অবস্থা হলে, পাচকনলে ফুটো হলে বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটিন সরে যায় রক্তস্রোতে, ফলে ঘটায় প্রদাহ, এলার্জি, অটোইম্যুন রোগ, বিষন্নতা, ডায়াবেটিস ও স্থূলতা। হূদরোগ এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। প্রদাহ প্রভাব ফেলে মগজ  ও স্নায়ুর উপর, বিষন্নতা, মগজের চড়াই উত্রাই এবং বিরক্তিভাব।

নিচের ওষুধগুলো হলো এনএসএআইডি, খাবেন বুঝে-শুনে

* এডভিল/মট্রিন

ঁ* এসপিরিন

* এলিভ (ন্যাপ্রোক্সেন সোডিয়াম)

* সেলেব্রক্স

* নেপ্রোসিন

* লোডিন (এটোডলাক)

* মবিক

* নেলফিন (ফেনোপ্রোফেন)

* ডেপ্রো (ওক্সাপ্রোজেন)

* কক্স-২ (ইনহিবিটরস)

* ক্যামবিয়া/ক্যাটাফ্লাম/ভলটারেন (ড্রাক্লোফেনাক)

ওষুধটি কি রোগের মূলে কাজ করে, না উপসর্গ উপশম করে-

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এনএসএআইডি চিকিত্সা করেনা রোগের মূল কারণ, উপসর্গ উপশম করে মাত্র। স্বাস্থ্য সমস্যার মূলকারণ চিকিত্সা চাই। সারাহর ক্ষেত্রে তার পরিপাকতন্দ্র সারানোর কাজ করলেন ডাক্তাররা, সেই লেইক গাট থেকেই তার হয়েছিলো আথ্রাইটিস, অনবরত পেট ব্যথা এবং দুশ্চিন্তা। তার খাবার থেকে গ্লুটেন ও দুধজাত দ্রব্য সরানোর হলো। লেইকি গাট ও প্রদাহ এসব থেকেও হয় অনেকের। তার স্যাস্ট্রাইটিস সারাবার জন্য দেওয়া হলো সহজ কিচু সাপ্লিমেন্ট-পাকস্থলীর প্রদাহ সারাতে শুরু করলো লেইকি গাট সারাতে শুরু করলো। এসব সাপ্লিমেন্টের মধ্যে ছিলো কারকিউমিন (হলুদের মধ্যে একটি উপকরণ), ডিজিএল (চুষবার বড়ি), দস্তা ও এল-গ্লুটামিন।

সুখী, বেদনামুক্ত বালিকা সারাহ

কয়েক মাসে সারাহ ভালো হয়ে উঠলো। এন্টাসিড ওষুধ ও এখন আর লাগেনা। হাড়ের গিটে ব্যথা নাই। দুশ্চিন্তা নাই। খেলাধূলা করে হাস্যমুখী আবার। প্রচন্ড পেট ব্যথাও আর নেই সারাহর।

লিকি গাট এর জন্য চিকিত্সা

১. ব্যথার মূলে যেতে হবে,

প্রদাহের মূল।

২. সব ওষুধ বাদ, এনএসএআইডি, এসপিরিন, এসিডব্লকারস, এন্টিবায়োটিকস বাদ।

৩. এলিমিনেশন ডায়েট-গ্লুটেন ও দুধজাত দ্রব্য বাদ।

৪. প্রোবায়োটিকস গ্রহণ

৫. পুষ্টি উপকরন ও সাপ্লিমেন্ট।

ওষুধ খাওয়ার সময় সাবধান। নিজে নিজে কখনও ওষুধ খাবেন না। অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শে খাবেন। ব্যথা নাশক ওষুধ যে কোনও সময় না খেয়ে ব্যথা কমাবার অন্য কৌশল চেষ্টা করে দেখুন।

¡অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী

পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস বারডেম, ঢাকা।

No comments:

Post a Comment

কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা

তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ আবার খাবারের সময় অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ নিয়ে রুচিসহকারে খেতে থাকেন। তাঁদের জন্য আরও সুখ...