Wednesday, November 11, 2015

পিত্ত পাথর

পিত্তথলি একটি ছোট, ৭ থেকে ১২ সেন্টিমিটার লম্বা, নাশপাতির মত দেখতে যা লিভার এর নীচে পেটের উপরাংশের ডান দিকে থাকে। এখানে পিত্তরস জমা থাকে যা খাবার হজমে সহায়তা করে, বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার। সব বয়সেই পিত্তপাথর হতে পারে। মহিলাদের এ রোগের আধিক্য পুরুষের তুলনায় দুই থেকে তিন গুন বেশী। ১৫ বছরের পর থেকে প্রতি বছর মহিলাদের ১%, পুরুষদের ০.৫% হারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। মহিলাদের প্রজনন সময়কালীন সময় (জবঢ়ৎড়ফঁপঃরাব ষরভব) বিশেষ করে গর্ভকালীন সময়ের পর এ রোগ বেশী দেখা দেয়। বাচ্চাদেরও পিত্তপাথর হতে পারে যদি পিত্তে জন্মগত ত্রুটি বা রক্তকণিকা অপরিপক্ক অবস্থায় ভেঙ্গে যাওয়া রোগ থাকে।
কেন পিত্ত পাথর হয় ঃ
পিত্তথলির জন্মগত ত্রুটি
পিত্তরসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়া বা পানি কমে যাওয়া
পিত্তথলির সক্রিয়তা বা কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া বা নষ্ট হওয়া।
পিত্ত থলির পাথর হওয়ার কারণ/ঝুঁ্্কি সমূহ ঃ
মহিলাদের প্রজনন সময়কালীন সময় বিশেষ করে গর্ভকালীন সময়ের পর - গর্ভকালীন সময়ে বিশেষ হরমোনের মাত্রা বাড়ে ফলে পিত্তরস ঘন হয় ও পিত্তথলির সক্রিয়তা কমে যায়
অতিরিক্ত চর্বি ও শর্করা জাতীয় খাবার বেশী খাওয়ার অভ্যাস থাকলে
অতিরিক্ত মোটা হলে বা শারীরিক পরিশ্রম না করলে (ংবফবহঃধৎু ষরভব ংঃুষব)
ডায়াবেটিস থাকলে
রক্তে চর্বি অতিরিক্ত মাত্রায় থাকলে
দীর্ঘদিন না খেয়ে থাকলে
দ্রুত ওজন কমালে (সপ্তাহে ১ কেজি বা তার বেশী)
লিভার এর রোগ বিশেষ করে সিরোসিস থাকলে
রক্তরোগ যেমন- ঐধবসড়ষুঃরপ ধহধবসরধ
সার্জারীর ইতিহাস যেমন- পাকস্থলীর বাইপাস অপারেশান থাকলে
ওষুধ যেমন জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি, রক্তে চর্বি কমানোর কোন কোন ওষুধ।
পিত্ত পাথরের রকমফের ঃ
তিন প্রকার। কোলেষ্টেরল, পিগমেন্ট ও মিশ্রণ।
কোলেষ্টেরল ঃ উন্নত বিশ্বে বিশেষ করে আমেরিকা ও ইউরোপে শতকরা ৮০ ভাগ পিত্তপাথর এই প্রকারের। পাথর সাধারণত একটি হয় ও আকারে বেশ বড় হয়।
পিগমেন্ট ঃ এটা আবার দুই প্রকার, কালো ও বাদামী রংয়ের। এশিয়া মহাদেশে এই প্রকারের পিত্ত পাথর বেশী হয়, শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ। ছোট আকারের একাধিক পাথর হয়।
৩. মিশ্রণ ঃ উপরের দুই প্রকারের সংমিশ্রণে তৈরী হয়।
পিত্ত পাথরে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ সমুহ ঃ
শতকরা ৮০ ভাগ পিত্ত পাথর রোগের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না বা উপসর্গ থাকে না, অন্য সমস্যার জন্য পেটের পরীক্ষা করলে উটকো (রহপরফবহঃধষ) হিসাবে পিত্ত পাথর ধরা পড়ে। কোন উপসর্গ না থাকলে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, তবে সতর্ক থাকতে হবে কারণ এই উটকো পাথরের ১ থেকে ২ ভাগ প্রতি বছর উপসর্গ তৈরী করে। উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দিলে তা নিম্নরুপ -
পেট ব্যথা ঃ সাধারণত পেটের উপরাংশের ডান দিকে হয়। তীব্রতা হালকা থেকে তীব্রতর হতে পারে। ব্যথা অনেক সময় ডান পাশ্র্বের ঘাড়েও হয়। সাথে বমি, জ্বর থাকে।
পেট ফাপা বা ক্ষুধামন্দা হতে পারে। একবার খেলে আর খেতে মন চায় না, মনে হয় পেট ভরাই আছে।
জন্ডিস হতে পারে, যদি পাথর পিত্ত নালীতে চলে যায়।
রোগ নির্ণয়ের উপায় ঃ
খালি পেটে পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফী করলে পিত্ত পাথর সহজেই ধরা পড়ে।
চিকিৎসা ঃ
যাদের কোন উপসর্গ নেই, পেটের বা কোমরের অন্য সমস্যার জন্য পরীক্ষা নীরিক্ষার সময় পিত্ত পাথর নির্ণয় হয়েছে তাদের কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে সতর্ক থাকতে হবে কারণ এর ১ থেকে ২ ভাগ প্রতি বছর উপসর্গ তৈরী করে। উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্র দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বিশেষ করে পেটের উপরাংশে ব্যথা হলে । উপসর্গ নাই কিন্তু নিম্নের যেকোন একটি সমস্যা বা রোগ থাকলে চিকিৎসা লাগবে -
পিত্ত পাথর এর আকার ২ সেন্টিমিটার এর বেশী
পিত্ত থলি সক্রিয় বা কর্মক্ষম নয়
ডায়াবেটিস
লিভার এর রোগ বিশেষ করে সিরোসিস
রক্ত কনিকার রোগ যেমন - অপরিপক্ক অবস্থায় ভেঙ্গে যায়
শিশু
অঙ্গ প্রতিস্থাপন লাগবে এমন রোগী।
চিকিৎসা দুই প্রকার। মেডিসিনে চিকিৎসা ও সার্জারী।
মেডিসিনে চিকিৎসা ঃ বেশীর ভাগ রোগী চায় ওষুধ দিয়ে পিত্ত পাথর বের করে দিতে বা গলিয়ে দিতে। তবে পিত্ত পাথরের চিকিৎসায় মেডিসিনের ভূমিকা খুবই নগণ্য। এজন্য বাজারে যে ওষুধ পাওয়া যায় তার কার্যকারিতা সামান্য, সফলতার হার নেই বললেই চলে, ওষুধের দামও বেশী। ১ থেকে ২ বছর পর্যন্ত একটানা ওষুধ খেতে হয়। এছাড়া ডায়রিয়া, রক্তশূন্যতা ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মত মারাত্বক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি আছে।
সার্জারী ঃ পিত্ত পাথর চিকিৎসায় সার্জারী অতি উত্তম চিকিৎসা। এক্ষেত্রে শুধু পাথর না ফেলে পুরো পিত্ত থলি কেটে ফেলতে হয়, পুরো না কাটলে আবার পাথর হয়। সার্জারীর মধ্যে ল্যাপারোস্কপিক (পেট না কেটে ছোট ছোট ৩/৪ টি ফুটো করে) পদ্ধতি সেরা। দক্ষ সার্জন দ্বারা সার্জারী করালে পিত্ত থলির পাথর অপারেশান এর ঝুঁকি নেই বললেই চলে।
এছাড়া পিত্ত পাথর মেশিন দিয়ে ভেঙ্গে (ঊঝডখ) ফেলা যায়। সেক্ষেত্রে পুনরায় পাথর হওয়ার হার শতকরা ২০ ভাগ। 
লক্ষণ বা উপসর্গ থাকার পরও চিকিৎসা না করলে নিম্নোক্ত জটিলতা হতে পারে ঃ
পিত্ত থলিতে পুন: পুন: ইনফেকশন বা প্রদাহ হতে পারে
পিত্ত থলিতে পূঁজ হতে পারে
পিত্ত থলি ফুটো হয়ে যেতে পারে
পিত্ত নালীতে ইনফেকশন/প্রদাহ বা পিত্ত নালী বন্ধ হয়ে গিয়ে জন্ডিস হতে পারে
অগ্নাশয়ে প্রদাহ হতে পারে
পিত্ত থলির ক্যান্সার হতে পারে, তবে তা খুবই নগণ্য (ঝুঁকি শতকরা মাত্র 
০.০৮ ভাগ)

No comments:

Post a Comment

কাঁচা মরিচের রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা

তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। কেউ কেউ আবার খাবারের সময় অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ নিয়ে রুচিসহকারে খেতে থাকেন। তাঁদের জন্য আরও সুখ...